ধর্ম ডেস্ক :: মানুষমাত্রই মাঝে মাঝে ভুল করে ফেলে। গুনাহে জড়িয়ে যায়। এটা মানুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। ভুল করার পর মানুষ যদি অনুতপ্ত হয়, ভুল পথ থেকে ফিরে আসে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন।
কোরআনের অনেকগুলো আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন তিনি গাফুর ও রাহিম অর্থাৎ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। গুনাহ করে ফেললে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করে সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আল্লাহ বলেন,
قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤي اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ.
বলো, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা জুমার: ৫৩)
তাই গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে মানুষের কর্তব্য দ্রুত অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া এবং তওবা করা। নিজের গুনাহ গোপন রাখা। এটা খুবই জরুরি। কারো মনে যদি অনুতাপ না থাকে, সে যদি গুনাহ করার পরে আবার সেটা নির্বিকারভাবে বা বুক ফুলিয়ে প্রকাশ করে, তাহলে তার জন্য ক্ষমা পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلَّا الْمُجَاهِرُونَ وَإِنَّ مِنَ الْمَجَانَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ عَمَلًا بِاللَّيْلِ ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ. فَيَقُولَ: يَا فُلَانُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ
আমার সব উম্মত ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে আছে; কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের অপরাধ প্রকাশ করে, সে ক্ষমাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এটা কতই না লজ্জাহীনতার কাজ যে, কোনো ব্যক্তি রাতে খারাপ কাজ করে আর আল্লাহ তাআলা তার কুকর্ম গোপন করে রাখেন। তারপর সকাল হতেই সে লোকেদের বলে বেড়ায়, হে অমুক! আমি রাতে এ রকম কাজ করেছি। আল্লাহ তাআলা রাতে তার দোষ ঢেকে রেখেছিলেন, কিন্তু সকাল হতেই সে আল্লাহ তাআলার পর্দা উন্মুক্ত করে দিলো। (সহিহ বুখারি: ৬০৬৯, সহিহ মুসলিম: ২৯৯০)
অন্যের গোপন পাপ গোপন রাখতে হবে-
নিজের পাপের পাশাপাশি অন্যের গোপন পাপও গোপন রাখা সওয়াবের কাজ, প্রকাশ করে দেওয়া গুনাহের কাজ, যদি ওই পাপ জুলুম বা অন্যের হকের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয় এবং তা গোপন রাখার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَا یُحِبُّ اللّٰهُ الۡجَهۡرَ بِالسُّوۡٓءِ مِنَ الۡقَوۡلِ اِلَّا مَنۡ ظُلِمَ وَ كَانَ اللّٰهُ سَمِیۡعًا عَلِیۡمًا
মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারো উপর জুলুম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (সুরা নিসা: ১৪৮)
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
من ستر مسلماً، ستره الله يوم القيامة
যে কোনো মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন। (সহিহ মুসলিম)
অন্যের পাপ খুঁজে বেড়ানো যাবে না-
কাউকে অপদস্ত করার জন্য তার পেছনে লেগে থাকা, তার ভুলত্রুটি খোঁজা ইসলামে একটি বড় গুনাহ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা অহেতুক কুধারণা, অন্যের পেছনে গোয়েন্দাগিরি ও গিবত করতে নিষেধ করে বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا كَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُكُمۡ بَعۡضًا اَیُحِبُّ اَحَدُكُمۡ اَنۡ یَّاۡكُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَكَرِهۡتُمُوۡهُ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ
হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান গুনাহের কাজ। আর তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না করো না এবং একে অপরের গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু। (সুরা হুজুরাত: ১২)