১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

add

তীব্রগরমে ক্ষতির মুখে শান্তিগঞ্জের ব্যবসায়ীরা, অতিষ্ঠ জনজীবন

todaysylhet.com
প্রকাশিত ২৯ জুলাই, সোমবার, ২০২৪ ১৮:৪৯:১৮
তীব্রগরমে ক্ষতির মুখে শান্তিগঞ্জের ব্যবসায়ীরা, অতিষ্ঠ জনজীবন

শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি :: টানা চারদিন ধরে তীব্র গরম পড়েছে শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। অসহনীয় এমন গরমে ব্যপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ উপজেলার কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষের জীবনে উঠেছে নাভিশ্বাস। নিম্ন আয়ের মানুষেরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

বিশেষ করে আম, কাঁঠাল, আনারস ও কলা জাতীয় ফলের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা আছেন দুশ্চিন্তায়। পল্লী বিদ্যুতের দিন-রাতের লুকোচুরি খেলায় স্থানীয় ভাবে বরফ তৈরি করতে না পারায় মাছ সংরক্ষণ করতে পারছেন না মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এতে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে মাছ, লোকসানের মুখে মৎস্যজীবীরা। তাই, এমন গরমের মাঝে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সেবা চান উপজেলাবাসী।

উপজেলার পাগলা বাজারের একাধিক মৎস্য ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যতদিন ধরে গরম বেশি হচ্ছে মাছের ব্যবসায় ততদিন ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে অর্ধেকের বেশি। কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, দিন এবং রাতে বেশিরভাগ সময় বিদ্যুত থাকে না। যদি বিদ্যুত না থাকে তাহলে ফ্যাক্টরির লোকজন বরফ তৈরি করতে পারেন না। বরফ যদি না থাকে তাহলে মাছ সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই বাইরের ক্রেতারা মাছ কিনতে রাজি হন না। এতে মাছের দাম কমে যায়। এজন্য মৎস্যজীবীরা ব্যবসায় ব্যপক লোকসান করতে হচ্ছে।

বরফ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদ্যুত না থাকায় চরম ক্ষতি হচ্ছে তাদের। ৫শ’ পিস বরফ উৎপাদের সক্ষমতা যাদের আছে তারা উৎপাদন করছেন ৮০ থেকে ১শ’ পিস বরফ। বাকী বরফের ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে হবিগঞ্জ, মাধবপুর, সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে এনে। এতে ৮০ টাকার বরফে খরচ পড়ছে ১শ’ ৫০ থেকে ২শ টাকা। সব মিলিয়ে গরম ও বিদ্যুতের প্রভাবে মাছের ব্যবসায় এ সপ্তাহে লোকসান গুনতে হচ্ছে অর্ধেকের বেশি।

কাঁঠাল, আম ও আনারস ব্যবসায়ীরা জানান, এমন গরমে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। গরমে কাঁঠাল একদমই কিনতে চাননা ক্রেতারা। দু’দিনের বেশি স্টকে থাকলে পঁচে যায় আম এবং আনারস। ফলে এমন তীব্র গরমে বিপাকে আছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও। এ ছাড়াও এমন তীব্র গরমে হাটবাজারে ক্রেতার সংখ্যাও খুব হাতেগোনা। সাধারণ ব্যবসায়ী, রিকশা চালক, দিনমজুর, কৃষক ও অন্য পেশার মানুষেরাও গরমের চরম বিপাকে দিনাতিপাত করছেন।

পাগলা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা আবদুল গফুর বলেন, আমাদের অবস্থা একেবারেই শেষ। একে তো গরমে মাছ ধরতে গেলে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে তার উপর মাছ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনমত বরফ পাওয়া যাচ্ছে না। সারা রাতের ২০ বার বিদ্যুত আসে আর যায়। বরফ তৈরি হবে কখন? এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মধ্যে আছেন। প্রকৃত জেলেরা মাছের উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। যে মাছ স্বাভাবিক সময়ে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা সেই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকায়। আমরা চাই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত।

পাগলা বাজার থেকে মাছ কিনে নিয়ে গোবিন্দগঞ্জের মাছ বাজারে বিক্রি করেন ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, আমি সিলেট থেকে বরফ নিয়ে এসেছি। মাছ কিনে সংরক্ষণ করতে যে বরফ প্রয়োজন সেই বরফ নেই পাগলা বাজারে। তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি। এজন্য প্রতি পিস বরফে আমার ৫০ টাকার মতো বেশি খরচ হয়েছে। লায়েক মিয়া নামের আরেক মাছ ব্যবসায়ী ছাতক থেকে বরফ নিয়ে এসেছেন।

বরফ ব্যবসায়ী জিয়াউল হক বলেন, আমার পাঁচটি বরফমিলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত থাকলে এক রাতে ৫শ’ পিস বরফ তৈরি করতে পারবো। কিন্তু বিদ্যুত না থাকায় ৮০ থেকে ১শ’ পিস বরফ তৈরি হচ্ছে। বাকী বরফের ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে হবিগঞ্জ, মধুপুর ইত্যাদি জায়গা থেকে আমদানি করে। প্রতি পিস বরফে ৫০/১০০ টাকা করে বেশি খরচ হচ্ছে। ঠিকঠাক বিদ্যুত পেলে আমাদের এমন লোকসান হতো না।

কাঁঠাল ব্যবসায়ী ও প্রাক্তন ইউপি সদস্য সিরাজ মিয়া এবং আম ব্যবসায়ী ইউনুস আলী বলেন, যে গরম পড়েছে তাতে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। কাস্টমার কম থাকেন বাজারে। এমন গরমে দু’দিনের বেশি আম-কাঁঠাল টিকে না। পঁচে যায়। তাই দু’দিন পরে লাভ-ক্ষতি হিসেব না করে যত তারাতাড়ি সম্ভব বিক্রি করতে হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে শান্তিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের এজিএম ইয়াছিন মাহমুদ ইমরানকে মুঠোফোনে একাধিকবার কলে দিলেও তিনি ফোন কল করেন নি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। লোডশেডিং-এর কারণে সাময়িক এ অসুবিধা হচ্ছে।