টুডে সিলেট ডেস্ক :: রাস্তাঘাট হাটবাজার কিংবা বসতবাড়ি যে কোন জায়গায় হাত বাড়ালেই মিলে মাদক। স্কুল কলেজ অথবা মাদ্রাসার চারপাশে পড়ে আছে মাদকের পরিত্যক্ত বোতল। রাস্তায় হাঁটতে গেলে চোখে পড়বে মাদক সেবনের দৃশ্য। কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাচ্ছে কেউবা একটু আড়ালে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পুরুষ অথবা মহিলা সবাই সেখানে বিক্রেতা। সমাজের মাতব্বরদের ছত্রছায়ায় বেড়েওঠা মাদক কারবারিদের সামাজিক ভাবে প্রতিহত করতে না পেরে রাস্তায় মানববন্ধন করেন সচেতন এলাকাবাসী।
দু’বার রাস্তায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করলেও পুলিশকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বলছিলাম সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের কথা। যা বর্তমানে মাদকের ওপেন হাট হিসেবে পরিচিত।
দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ইমাদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পুলিশের সমালোচনা করে লিখেন, ‘পুলিশ আর মাদক কারবারি একসাথে বেশ চমৎকার মউজে আছে, তাদের বন্ধুত্ব নিরপরাধ মানুষের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে গেছে। পুলিশ আর মাদক কারবারি একত্রিত হয়ে সমাজটাই দখলে নিয়েছে।’
দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের খাগাইল, পূর্ণাছগাম, সুন্দাউরা, দরাকুল ও গৌরীনগর যেন মাদক বিক্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব ভূমিকায় ধীরে ধীরে বাড়ছে বিক্রেতার সংখ্যা। কম পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় মাদক ব্যবসায় ঝুঁকছেন এই এলাকার মানুষ।
এদিকে সিলেটের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় তাদের ব্যবসায় পোয়াবারো হয়ে গেছে। যার ফলে রাত-দিন জমজমাট থাকে মাদকসেবিদের আনাগোনায়। ফেনসিডিল মদ কিংবা ইয়াবা সব কিছুই সেখানে সহজলভ্য। গত সপ্তাহে সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে মাদক বিক্রি বন্ধের প্রতিবাদে খাগাইল এলাকার ছাত্র, যুব সমাজ ও খাগাইল ইসলামি সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন- দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হুসেন ইমাদ।
প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন- লিডিং ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান।
এসময় বক্তারা বলেন, “দক্ষিণ রণিখাইয়ে প্রকাশ্যে মাদক কেনা-বেচা ও সেবন চলছে। এটা নিয়ে বর্তমানে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা শঙ্কিত। এই এলাকার মানুষের জীবন এখন অনেকটা হুমকির সম্মুখীন। এখন এলাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, রাস্তাঘাটে হাঁটা অনেকটা কঠিন। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মাদক সেবন করছে আর আপনি বলতে পারবেন না যে ভাই আপনি একটু দূরে সরে গিয়ে কাজটা করেন। এখানে জনসম্মুখে মাদকের এত ব্যাপকতা যা এখন শুধু আমাদের এলাকা নয় পুরো দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। তবে সবচেয়ে বেশি আমরা যেটা নিয়ে শঙ্কিত সেটা হলো আমাদের এলাকায় মাদকের নির্মূলে পুলিশের সক্রিয় কোনো ভূমিকা নেই। কারণ দেখা যায় একজন মাদকসেবি ও বিক্রেতা নির্বিঘ্নে তার বাড়িতে মাদক মজুদ রাখছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের মাদক বিক্রয়ের কাজে যুক্ত করছে। মাদকসেবনকারী তাদের বাড়িতে আসছে রাস্তায় এসে গাড়ির হরণ বাজানো মাত্রই স্বাগতম জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। কখনো হরণ বাজানোর পর বাচ্চারা গাড়িতে মাদক দিয়ে আসছে। এখন এত ব্যাপকভাবে মাদকের কেনাবেচা চলছে যে, একটা বাচ্চাও জানে যে কার বাড়িতে মদ বিক্রি হচ্ছে, কোথায় মদ মজুদ হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এটা জানে না! অজানা কারণে কোনো অ্যাকশন নিচ্ছে না।”
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি বদিউজ্জামান জানান, “আমি থানায় যোগদান করে যেনেছি মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে। আমিও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেছি। দক্ষিণ রনিখাইকে মাদক মুক্ত করতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিব। ইতিমধ্যে খাগাইলে একটি চেকপোস্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। সেখানে আমাদের ট্রাফিক পুলিশও গাড়ির কাগজপত্র চেক করবেন।”