টুডে সিলেট ডেস্ক ::গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে দুই যুবকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ২টার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার ধারাবাহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার তাজ উদ্দিন (৪৩), ঢাকাদক্ষিণ মিছিম গ্রামের বাসিন্দা কয়ছর আহমদের ছেলে নজমুল ইসলাম (২৪) ও শিলঘাটের বাসিন্দা সানি (১৮) বলে। স্থানীয় ইউপি সদস্য এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সানি আহমদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল গফফার।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা. সুদর্শন সেন বলেন, নিহতদের মধ্যে তাজ ও নজমুলের মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। স্থানীয়রা আরও দুয়েকজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। তবে আমরা বাড়তি কোনো মরদেহ পাইনি। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের সাময়িক চিকিৎসা দিয়ে ওসমানী মেডিওকল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের সরিয়ে দিতে চায় পুলিশ। সেখানে বিজিবিও উপস্থিত ছিল। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ছাত্র-জনতার তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। বিভিন্ন মসজিদে ঘোষণা দিয়ে এসময় এলাকাবাসীও সংঘর্ষে জড়িত হন।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্র-জনতা ও এলাকাবাসী পুলিশ-বিজিবির দিকে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। পুলিশ-বিজিবিও গুলি, টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। তবে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পরে তারা পিছু হটে।
কিছুক্ষণ পর সংঘর্ষ গোলাপগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর ২টার দিকে পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কিছু মানুষ জড়ো হলে সেখানে পুলিশ ও বিজিবি উপস্থিত হলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে তাজ উদ্দিন ও সানি আহমদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তাজ উদ্দিনের লাশ নিয়ে পৌরশহরে এসে ধারাবহর এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বর্তমানে গোলাপগঞ্জ পৌরশহর ও ঢাকাদক্ষিণ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
সিলেট জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. সম্রাট তালুকদার সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই এলাকায় পরিস্থিতি খুবই থমথমে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টায় রয়েছে। যে কারণে হতাহতের কোনো খবর এখনো পাইনি।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে কোর্ট পয়েন্টে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর বেলা দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগ মিছিল বের করে। এছাড়া জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা পয়েন্টে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অনেকে হতাহত হয়েছেন। তবে কতজন আহতদের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সরকার পতনের একদফা দাবিতে রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে ছাত্র-জনতা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সড়কে নামেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুরে নগরের কোর্ট পয়েন্টে পুলিশ-আন্দোলনকারী পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে মহানগরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে।
দুপুর ১টা থেকে জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বারুতখানা, জেলরোড, হাওয়াপাড়া, মিরবক্সটুলা, নয়াসড়ক ও আম্বরখানাসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেয়। সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে তারা যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। নগরের প্রতিটি পয়েন্টে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করতে সশস্ত্র অবস্থান নেয়।
বিকেল ৪টার দিকে সিলেট নগরের উপশহর শাহজালাল ব্রিজ সংলগ্ন আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এসময় আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তার গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। আতঙ্কিত হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পার্শ্ববর্তী গার্ডেন টাওয়ারে গিয়ে আশ্রয় নেন।
সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় তাদের কেউ হতাহত হননি বলেও জানান। প্রাণভয়ে পার্শ্ববর্তী বহুতল ভবন গার্ডেন টাওয়ারে আশ্রয় নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিকাল ৪টার দিকে অন্তত অর্ধশতাধিক লোকজন নির্বাচন অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করে। এরপরে হামলাকারীরা আয়কর অফিসে ভাঙচুর করে।
এরপর বিকেল ৫টার দিকে নাইওরপুল এলাকা ব্লক করে রাখে ছাত্র-জনতা। তারা নাইওরপুল থেকে পূর্ব মিরাবাজার পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখসহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। আহতরা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।