এ চার জেলা ছাড়া অন্যান্য জেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ডিসিরা।
শনিবার (০৩ আগস্ট) রাত সোয়া ১০টার দিকে সচিবালয়ে করা এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়। পরে বৈঠক শেষে সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোববার (০৪ আগস্ট) থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীতে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে। অন্যান্য জেলায় জেলা প্রশাসকরা পরিস্থিতি অনুযায়ী কারফিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রসঙ্গত, নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার (৩১ জুলাই) থেকে শনিবার (০৩ আগস্ট) পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীতে সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকার কথা বলা হয়েছিল।
মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একজন ছাত্র নিহত হয়েছিল। এ জন্য প্রাথমিকভাবে দুইজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ছাত্রদের যে দাবি ছিল, সেটা করা হয়েছে। এছাড়া গতকাল খুলনায় দুই পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। পুলিশ সব সময় জানমাল ও মানুষের হেফাজতের জন্য কাজ করে। পুলিশ চরম ধৈর্য সহকারে আন্দোলনের শুরু থেকে মোকাবিলা করছে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলাম ও বিএনপি সবসময় ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিল। শুরু থেকেই তারা দেশকে অকার্যকর করতে চেয়েছিল। যে কারণে ছাত্রদের কাছে আহ্বান, তারা যেন লেখাপড়ায় ফিরে যান। কারণ তাদের সব দাবি পূরণ করা হয়েছে। এরপরেও যদি তাদের কোনো দাবি থাকে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরজা সবসময় খোলা আছে।
অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অসহযোগ আন্দোলন আমরা নস্যাৎ করতে চাই না। জনগণ যদি আন্দোলন চায়, করতে পারবে। তবে কেউ মার দিতে চাইলে কেউ বসে থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আত্মরক্ষার আইনি অধিকার দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলে দেই, আমাদের শোকের মাস চলছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস। মাসটিকে শোকের মাস হিসেবে পালন করি। বঙ্গবন্ধু শাহাদতবরণ করার পর থেকে এটি চলছে।
এর আগে, এদিন বিকেলে শহীদ মিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদের পদত্যাগের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পাশাপাশি রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান কর্মসূচিও দিয়েছে তারা।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অসহযোগ আন্দোলনকে সামনে রেখে তিনি কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচিগুলো হলো- অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি রোববার সব জেলা, উপজেলা, পাড়ায়, মহল্লায় বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান; সব খুনের বিচার ও সব রাজবন্দিকে মুক্ত করা।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের পক্ষে সব ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তিনি।
রোববারের মধ্যে হল খোলা না হলে শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্বে হল খুলে প্রবেশ করবে।
নাহিদ বলেন, ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করা হবে যেখানে সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। এমন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করা হবে যাতে বাংলাদেশে আর কখনোই স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।
সর্বস্তরের নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে শীঘ্রই ক্ষমতা হস্তান্তরের জাতীয় রূপরেখা হাজির করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের নাগরিকদের নিয়ে জাতীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হবে।