টুডে সিলেট ডেস্ক :: পুলিশ সদস্যদের কাজে ফেরার জন্য একটা তারিখ বেঁধে দেওয়া হবে। এরমধ্যে যদি কোনো পুলিশ সদস্য কাজে না ফেরেন তাহলে তাকে পলাতক ধরে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করেছে- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি আজ গিয়ে এ বিষয়ে (পুলিশের যোগদানের বিষয়ে) আলোচনা করব। একটা তারিখ দিয়ে দেব। এরমধ্যে যদি কেউ না আসেন, ধরে নেব তারা পলাতক।
পুলিশ সদস্যদের ঘাটতি তাৎক্ষণিকভাবে পূরণে অনেক মেকানিজম আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সবকিছু বলছি না। তবে আমরা সবাই মিলে একটা তারিখ দেব। এরমধ্যে যদি যোগদান না করে তাহলে ধরে নেওয়া হবে তারা পলাতক।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর যে হামলা হয়েছে, এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মাথার চামড়া খুলে ফেলা, হাত-পা-মাথা থেতলিয়ে ফেলা, এটা টলারেট করার মতো না। হাজার তরুণ মারা গেছে, পুলিশ ও অন্যদের গুলিতে, এটাও দুঃখজনক।
পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর লুট হওয়ার খবর পাচ্ছি। আমাদের সেনাবিহিনী ও বিজিবি মাঠে আছে, কিন্তু এটা তাদের কাজ না। পুলিশের যেটা কাজ, সেটা তারা পারে না।
একটা রাষ্ট্র এভাবে চলে না, একজনের ইচ্ছামতো রাষ্ট্র চালানো যায় না উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশটা কারো পার্সোনাল প্রপার্টি বা ফ্যামিলি প্রপার্টি না। হাজার হাজার লোক মারার পরেও ক্ষমতায় থাকতে চাওয়ার মানসিকতা, পুলিশকে ব্যবহার করেছে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো। তাদের হাতে গত ১৫-২০ বছর আগে মারণাস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি, এটা ঠিক হয়নি।
আবার আসেন, জনগণ ছিঁড়ে ফেলবে – ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্টকর হবে। পুলিশকে আর লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করতে পারবেন না। পুলিশ কমিশনের মতো পুলিশ চলবে, বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় ডাকাতি হচ্ছে। কী করবেন পুলিশ নাই, পুলিশ সদস্য ডিমোরালাইজড হয়ে গেছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে পুলিশকে ব্যবহার করেছে কে? তাদের ধরেন। আমি চেষ্টা করব হুকুমদাতা যারা ছিল তাদের শাস্তি হবে, কঠোর শাস্তি হবে। দেশে না পারলে বিদেশে হবে। এটা কোন কথা হলো? হুমুক দিয়ে ছেলেপেলে আর জনগণকে মারবেন, এটা হতে পারে না। আবার আসেন, দেখেন জনগণ কী করে? জনগণ ছিঁড়ে ফেলবে এবার। এটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, কারা পুলিশকে এভাবে ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতি হয়ে গেছে চাটুকারদের রাজনীতি। আমরা কোনো রজনীতিবিদ তৈরি করিনি, চাটুকার তৈরি করেছি। মানুষ মরে যাচ্ছে, কিন্তু বলা হচ্ছে, না সব ঠিক আছে। এরকম চাটুকারদের দল দিয়ে রাজনীতি করা যায় না।
চাটুকারি করলে মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাবে – সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আপনাদের মিডিয়া, অন্তত এই পিরিয়ডে কোনো মিডিয়া চাটুকারি করলে মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। চাটুকারি মিডিয়া হবেন, বন্ধ করে দেব। অতীতে যা ছিলেন ছিলেন, আমি কোনটা বন্ধ করতে চাই না। আমি এক কথার মানুষ, চাটুকারি করবেন বন্ধ করে দেব।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সত্যি ঘটনা তুলে ধরেননি। যদি ধরতেন তাহলে পুলিশের এ অবস্থা হয় না। বার বার বলছেন, কিছু হয়নি। শেম অন ইউ। শেম অন দ্য মিডিয়া ওনার।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আপনারা টকশোতে কাকে ডাকা যাবে, কাকে ডাকা যাবে না লিস্ট করেন। সেখানে জ্ঞানগর্ভ কোনো আলোচনা হয় না। আটকে গেলেই চলে যান ‘৭৫-এ কী হয়েছিল। অনুগ্রহ করে তাদের ডাকবেন না, চাটুকারদের ডাকবেন না। দয়া করে সঠিক তথ্য তুলে ধরেন, যাতে যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের চোখটা যেন খোলে।
তিনি বলেন, একটা দেশ ডোবে কখন? যখন মিডিয়া সত্য কথা বলে না, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে। সবার বিচার হওয়া উচিত, মিডিয়া ওনারদেরও। নির্বাচনে চুরি হচ্ছে, বলে—কোনো সমস্যা নেই, ভোট খুব ভালো হয়েছে। দয়া করে দেশটাকে বাঁচান। যেটা হয়েছে সেটার তদন্ত হবে। দেশে তদন্ত হবে, আন্তর্জাতিক তদন্ত হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যা হয়েছে হয়েছে, ইতিহাসকে ফেরত আনতে পারব না। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ অনেক পুরনো পার্টি, সেখানে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তারা এ শিক্ষাটা গ্রহণ করবে। আমি চেষ্টা করব, যাতে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট থাকে। সে অনুযায়ী দল চালাতে পারলে চালাবেন, নয়তো বন্ধ করে দেবেন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করবেন না। যাদের টার্গেট করছেন তারা আপনার সন্তান।
রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু সেখানকার পুলিশ কমিশনারকে এখনও সরানো হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি প্রথমে বলেছি, এটা মার্ডার। আমরা এ ধরনের লোক চাই না, যারা গাইড করতে পারে না।
পুলিশ সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনাদের কয়েকজন প্রতিনিধি আসবেন, তাদের শতভাগ কথা শুনব। তারা এমন কোনো দাবি করেননি, যেটা পূরণ করা সম্ভব নয়। কিছু জায়গায় হয়তো দেরি হবে। আপনারা থানায় ফিরে যান।
দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি কবে নাগাদ ফিরবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটা স্বাভাবিক হওয়ার সম্পূর্ণ বিষয় জনগণের কাছে। সংখ্যালঘু যারা আছেন তারা আপনাদের সমাজেই বাস করেন। এ ধরনের হামলা কোথাও করতে দেবেন না। তাদের কোনো দোষ নাই। জনগণের কাছে অনুরোধ, আপনারা এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনুন। দুষ্কৃতকারী যারা আছে, ধরে ফেলেছে অনেক জায়গায়।
অনুষ্ঠানে আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, আমরা ভিআইপি রোডে ইতোমধ্যে ট্রাফিক সদস্যদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যে ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত বেশি করে ফোর্স দিয়ে চালু করেছি।
তিনি বলেন, আন্দোলনে সহিংসতায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, এরমধ্যে পরিদর্শক ৩ জন ও ২ জন র্যাব সদস্য। আহত অসংখ্য, শুধু রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালেই ৫০৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। যারা বেশি আহত এমন ২৭ জন, এদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২ জন। যারা আহত হয়েছেন তাদের আমরা সম্পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছি।