হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: ‘আওয়ামী লীগ শূন্য’ হয়ে পড়েছে একসময়ের ‘দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ’ হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ জেলা। নেতারা সব আত্মগোপনে চলে গেছেন। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন কর্মীরাও। জেলার চার এমপির মধ্যে তিনজনেরই সন্ধান নেই। তাদের মোবাইলফোনসহ যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ। একমাত্র নিজ বাসায় অবস্থান করছেন সাবেক স্বতন্ত্র এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া। একসময় লোকে লোকারণ্য থাকতো সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহিরের বাসা। সেটি এখন নিস্তব্ধ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ছয়তলা বাড়িটি।
রোববার সদ্য সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহির, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী, সদ্য সাবেক এমপি ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল, সদ্য সাবেক স্বতন্ত্র এমপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচিত মুখ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, হবিগঞ্জ পৌরমেয়র আতাউর রহমান সেলিম, যুবলীগ সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার হবিগঞ্জের বাসায় আছি। আমি সবসময় জনগণের পাশে ছিলাম, আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে আমার কোনো দ্বিমত ছিল না। তবে আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে যেন আমার এলাকায় কোনো প্রকার সহিংসতা না হয়। সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা কে কোথায় আছেন তা আমি জানি না। তবে গণমাধ্যমে নেত্রীর (শেখ হাসিনার) বক্তব্য দেখে অনুপ্রেরণা পাচ্ছি।’
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, হবিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুর দিকে বেশ দাপুটে ছিল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু ২ আগস্ট প্রথম দফায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আওয়ামী লীগ। এসময় শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় তারা পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এসময় দলীয় অফিস ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তৎকালীন এমপি আবু জাহিরের বাসার সামনে রাখা কিছু মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় তারা আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন।
বিভিন্ন অলিগলি থেকে বের হয়ে ফের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তারা। টানা ছয় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। পরে ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তারা। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের মিছিলে গুলি ছুড়লে এ সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় নেতাদের অনেকেরই সঙ্গে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। কিন্তু কয়েক মিনিটও টিকতে পারেননি তারা। নিমিষেই অনেকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
কয়েকজন গিয়ে জড়ো হন এমপি আবু জাহিরের বাসায়। তারা সেখান থেকে গুলিও ছুড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বাসাটি ঘেরাও করে ফেলেন। এসময় গুলিতে মারা যান রিপন শীল নামের একজন।
বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা অবরুদ্ধ ছিলেন। রাত ১১টার দিকে সেনাবাহিনী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শান্ত করে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করে। এরপর থেকেই মূলত আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হবিগঞ্জ শহরে দেখা যায়নি।
এদিকে, বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশের অস্ত্র খোয়া গেছে উল্লেখ করে কারও কাছে কোনো অস্ত্র থাকলে তা ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
রোববার সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন নিয়ামুল হক আজমিরীগঞ্জে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ আহ্বান জানান।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com