১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

add

স্বপ্নে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ সৌভাগ্যের

todaysylhet.com
প্রকাশিত ১২ আগস্ট, সোমবার, ২০২৪ ২৩:১৭:২৬
স্বপ্নে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ সৌভাগ্যের

ধর্ম ডেস্ক :: মুমিনের জীবনে স্বপ্ন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কেননা নবী-রাসুলদের জন্য ওহি এবং সাধারণ মানুষের জন্য ইলহাম (আল্লাহ প্রদত্ত অন্তরের জ্যোতি) তুল্য। স্বপ্নযোগে পাওয়া নির্দেশনা যদি শরিয়তের পরিপন্থী না হয়, তবে তা আমলযোগ্য। কোরআন ও হাদিসে স্বপ্ন বিষয়ে বিশদ বিবরণ রয়েছে।

 

সত্য স্বপ্ন নবুয়তের অংশ-

সত্য স্বপ্ন নবুয়তের অবশিষ্ট অংশ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি। সুসংবাদ বহনকারী বিষয়াদি ছাড়া নবুয়তের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, সুসংবাদ বহনকারী বিষয়াদি কী? তিনি বলেন, ভালো স্বপ্ন।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯৯০)

অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ৪৬ ভাগের এক ভাগ।

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২২৭১)

 

সত্য স্বপ্ন মুমিনের জন্য সুসংবাদ-

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে ও তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখিরাতে, আল্লাহর বাণীর কোনো পরিবর্তন নেই, এটাই মহাসাফল্য।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৬৩-৬৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘সুসংবাদ হলো সত্য স্বপ্ন, যা মুসলিম ব্যক্তি দেখে বা তাকে দেখান হয়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২২৭৩)

 

অবিশ্বাসীদের সত্য স্বপ্ন ও তার মর্যাদা পাপী ও অবিশ্বাসীরাও সত্য স্বপ্ন দেখতে পারে। যেমন ইউসুফ (আ.)-এর যুগের বাদশাহ ও তাঁর জেলের দুই সঙ্গী অবিশ্বাসী হওয়ার পরও সত্য স্বপ্ন দেখে ছিলেন। তবে সেই স্বপ্ন নবুয়তের অংশ নয়। কাজি আবু বকর ইবনুল আরাবি (রহ.) বলেন, মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের অংশ, পাপীর স্বপ্ন নবুয়তের অংশ নয় আর কাফির বা অবিশ্বাসীর স্বপ্ন ভিত্তিহীন। (ফাতহুল বারি : ১২/৩৬২)

 

হাফেজ ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) বলেন, যখন কোনো অবিশ্বাসী বা পাপী সত্য স্বপ্ন দেখে সেটা হয়তো তার সুপথ লাভ ও তাওবার সুসংবাদ অথবা কুফরি ও পাপের ওপর অটল থাকার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি। (ফাতহুল বারি : ১২/৩৮১)

 

নবীজি (সা.)-কে স্বপ্নে দেখা সৌভাগ্যের-

মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ মুমিনের জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয় যদিও তা স্বপ্নযোগে হোক না কেন।
কেননা তাঁকে স্বপ্ন্নে দেখা বাস্তবে দেখার মতোই সৌভাগ্যের। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে যেন আমাকে জাগ্রত অবস্থায়ই দেখল।’

(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০২৩)

 

পাপীরাও তাঁকে স্বপ্নে দেখতে পারে-

সাধারণত আল্লাহভীরু ও নবীপ্রেমিক মুমিনরাই নবীজি (সা.)-কে স্বপ্ন দেখে। অবিশ্বাসী ও পাপীরা স্বপ্নে নবীজি (সা.)-এর সাক্ষাৎ পায় না। তবে পাপী ও অবিশ্বাসীদের নবীজি (সা.)-এর সাক্ষাৎ পাওয়া অসম্ভব নয়। শায়খ আবদুল্লাহ বিন বাজ (রহ.) এ বিষয়ে বলেন, নবীজি (সা.)-কে স্বপ্নে দেখার জন্য তাঁর অনুগত হওয়া শর্ত নয়। তবে মুমিনের স্বপ্ন আর ফাসিকের স্বপ্নের তাৎপর্য সমান নয়।

(বিন বাজ ডটঅর্গ ডটএসএ)

আল্লামা ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) বলেন, ‘যারা আহলুত তাওফিক (সৌভাগ্যবান) কেবল তারাই রাসুল (সা.)-কে স্বপ্নে দেখতে পারে। কিন্তু যারা তাদের দলভুক্ত নয়, তাদের স্বপ্নে দেখার বিষয়টি সত্য হতেও পারে, আবার মিথ্যাও হতে পারে। কেননা শয়তানের চক্রান্তের মাধ্যমে একজন জিন্দিক তথা কাফিরের দ্বারাও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে পারে, যেমন তা হয়ে থাকে একজন সত্যবাদীর জন্য কারামতস্বরূপ। তবে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য অর্জিত হবে কিতাব ও সুন্নতের অনুসরণের দিক বিবেচনা করে। যিনি কিতাব ও সুন্নতের অনুসারী হবেন তাঁর স্বপ্ন সত্য হবে, আর যিনি কিতাব ও সুন্নতের অনুসারী হবেন না, তাঁর স্বপ্ন মিথ্যা হবে।’ (ফাতহুল বারি : ১২/৩৮৫)

 

নবীজি (সা.)-কে স্বপ্নে দেখা মিথ্যা নয়-

মুমিনরা স্বপ্নে নবীজি (সা.)-কে দেখলে যেমন সংশয় থাকে না, পাপীরাও তাঁকে দেখলে কোনো সংশয় থাকে না। কেননা শয়তান রাসুলে আকরাম (সা.)-এর আকৃতি ধারণ করতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে স্বপ্নে আমাকে দেখল সে আমাকেই দেখল। কেননা শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯৯৪)

 

স্বপ্ন যেভাবে সত্য হয়-

সত্য স্বপ্ন মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশনাপ্রাপ্তির মতো। তাই মুমিনের জীবনে সত্য স্বপ্ন প্রার্থিত বিষয়। মহানবী (সা.) সত্য স্বপ্ন লাভের আমল বলেছেন, তাহলো সত্য বলা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, সময় যখন কাছাকাছি হবে তখন মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না এবং যে যত সত্যবাদী হবে তার স্বপ্নও তত সত্য হবে। স্বপ্ন তিন প্রকার : ক. উত্তম স্বপ্ন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ, খ. ভীতিপ্রদ স্বপ্ন, যা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, গ. যা মানুষ চিন্তা-ভাবনা ও ধারণা অনুপাতে দেখে থাকে।

(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০১৯)

 

নবীজি (সা.)-কে স্বপ্নে দেখার আমল-

প্রাজ্ঞ আলেমরা নবীজি (সা.)-কে স্বপ্নে দেখার বিশেষ তিনটি আমল বর্ণনা করেছেন। তাহলো—ক. অন্তরে নবীজি (সা.)-এর প্রতি পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস ও ভালোবাসা, খ. সুন্নতের অনুসরণ, গ. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ২/২৩৪)

আল্লাহ সবার ভাগ্যে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ নসিব করুন। আমিন।