১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

add

অবশেষে জকিগঞ্জের মেয়র ফারুক আহমদ

todaysylhet.com
প্রকাশিত ১৩ আগস্ট, মঙ্গলবার, ২০২৪ ১৭:৪৪:১৪
অবশেষে জকিগঞ্জের মেয়র ফারুক আহমদ


জকিগঞ্জ প্রতিনিধি :: নির্বাচনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ (জগ প্রতীক) আইনি লড়াই শেষে ৬ ভোটে বিজয়ী হয়ে মেয়র হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করেছেন। মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিকী তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান।

 

এরআগে গত ৪ আগস্ট রোববার নির্বাচন কমিশন তাঁর মনোনয়নপত্র অনুসারে তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। ফলে নির্বাচনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর আগের মেয়র আব্দুল আহাদকে হটিয়ে ফারুক আহমদ মেয়রের চেয়ারে আসীন হয়েছেন। এতে ফারুক আহমদের ভোটারদের মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে।

সূত্র অনুসারে, ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারী সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শেষে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আহাদকে (নারিকেল গাছ প্রতীক) দুই হাজার ৮৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেন তৎকালীন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাদমান সাকীব। ঘোষিত ফলাফলে নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব স্বতন্ত্র¿ প্রার্থী ফারুক আহমদ (জগ প্রতীক) দুই হাজার ৮১ ভোট পান। ওই দুই প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দুই ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয়ের পার্থক্য দেখানো হয়। ফলাফল ঘোষণার পরপরই ওই ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ ভোট পুনঃরায় গণনার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিক ও লিখিতভাবে আবেদন করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শাদমান সাকীবের কাছে। কিন্তু পরাজিত মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ পাওয়ার পরও রিটার্নিং কর্মকর্তা আমলে নেননি। ভোটের পরদিন নির্বাচন কমিশনেও ভোট পুনঃরায় গণনা চেয়ে লিখিতভাবে দাবি করেন ফারুক আহমদ। তখনও কোন প্রতিকার পাননি।

তারপর হাইকোর্টে ফারুক আহমদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি তুলে ধরে অবৈধভাবে ঘোষণাকৃত বিজয়ী মেয়র প্রার্থীর ফলাফলের গেজেট স্থগিত ও ভোট পুনঃরায় গণনার আবেদন করেন। রিট আবেদনের পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হাসান হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শেষে ওই বছরের  ১৪ ফেব্রুয়ারি জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র পদের ফলাফল ও গেজেট স্থগিত করে এক মাসের মধ্যে ভোট পুনঃরায় গণনার নির্দেশ দেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিজয়ী মেয়র আব্দুল আহাদ আপিল করলে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। ফলে মেয়র পদে আব্দুল আহাদ ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গেজেট পেয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে শপথবাক্য পাঠ করে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে পরাজিত মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমদ হাইকোর্ট থেকে দায়েরকৃত রিট প্রত্যাহার করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সিলেটে ২০২১ সালের ৯ মার্চ ৩নং, ৪নং, ৫নং, ৬নং ও ৯নং ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র সমূহের ব্যালট পেপার ফের গণনা করে অবৈধভাবে নির্বাচিত মেয়র পদের ফলাফল বাতিল করে তাঁকে নির্বাচিত করার জন্য মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর ট্রাইব্যুনাল দরখাস্তকারীর মানিত সাক্ষী এবং বিবাদী পক্ষের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করে যুক্তিতর্ক শেষে ভোট পুনঃরায় গণনার আদেশ দেন। ওই আদেশের পর তিন ধাপে ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ, ৫ জুন এবং ৫ জুলাই বিচারকের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের আইনজীবীকে সামনে রেখে ট্রাইব্যুনালে ভোট পুনঃগণনা করা হয়। তখন উভয়পক্ষের আইনজীবীর মতামতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভোট পুনঃগণনায় দেখা যায়, পরাজিত মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমদ ২ হাজার ৭১ ভোট এবং আব্দুল আহাদ ২ হাজার ৬৫ ভোট পান। আব্দুল আহাদের চেয়ে ছয় ভোট বেশি পাওয়ায় মামলাকারী ফারুক আহমদকে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক আরিফুজ্জামান ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচিত ঘোষণা করেন।

ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৯ অক্টোবর আব্দুল আহাদ (নারিকেল গাছ প্রতীক) আপিল আদালত সিলেটে আপিল মামলা দায়ের করেন। শুনানি শেষে চলতি বছরের ৫ জুন সিলেটের আপিল আদালতের বিচারক এবং জেলা ও দায়রা জজ এ কিউ এম নাছির উদ্দীন দরখাস্তকারী আব্দুল আহাদের আপিল আবেদন না’মঞ্জুর করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় বহাল রেখে আদেশ দেন।

ওই আদেশের পর জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদের গেজেট প্রদান কার্যক্রমে আর বাধা না থাকায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে আব্দুল আহাদের নামে প্রকাশিত গেজেট সঠিক হয়নি মর্মে বাতিল করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের আদেশে দরখাস্তকারী ফারুক আহমদকে (জগ প্রতীক) তাঁর দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র অনুসারে বিজয়ী ঘোষণা গেজেট প্রকাশ করা হয়। ফলে দুই ভোটে পরাজিত মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমদ ৬ ভোটে বিজয়ী হয়ে নির্বাচনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে শপথ বাক্য পাঠ করেন।

এ প্রসঙ্গে জকিগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র ফারুক আহমদ জানান, জনগণ ভোট দিয়ে তাঁকে নির্বাচিত করার পরও অনিয়ম, কারচুরি করে তাঁর ফলাফল ছিনতাই করা হয়েছিলো। আদালতে গিয়ে ন্যায়বিচার পেয়েছেন। জনগনের ভোটের প্রতিফলন হয়েছে। এ বিজয় পৌরসভার সর্বস্তরের ভোটারদের বিজয়। সত্যের কাছে মিথ্যার পরাজয়। তিনি বলেন, যাদের কারচুপির কারণে প্রায় সাড়ে তিন বছর তিনি দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের বিচার করতে হবে। এবং তাঁকে ক্ষতিপূরণসহ তাঁর পূর্ণ মেয়াদ ফিরিয়ে দিতে সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন। তবে এ নিয়ে কথা বলে সদ্য সাবেক মেয়র আব্দুল আহাদের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 

এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম জানান, ট্রাইব্যুনালের রায়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়েছে। মেয়র হিসেবে ফারুক আহমদ দায়িত্বভার গ্রহণে আইনি কোন বাধা নেই।