হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: যুগে যুগে যেকোনো বিপ্লব ও আন্দোলনে দেয়ালচিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ফুটে ওঠেছে। আন্দোলন চলাকালীন দাবি, অর্জন কিংবা হারানো যা কিছু তা দেয়ালে দেয়ালে সাক্ষী হয়ে ওঠে। জার্মান প্রাচীর, মিসর বিপ্লব থেকে শুরু করে অ্যানার্কিস্ট আন্দোলনে সবসময় দেয়াল প্রতিবাদ চিত্র, ক্যালিগ্রাফি ইতিহাসের সাক্ষ্য দিয়ে এসেছে। এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হবিগঞ্জের বাহুবলের দেয়াল সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন সড়কসহ দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী ¯েøাগান, দাবি ও প্রতিরোধের বাণী লিখেছিলেন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানে ক্ষোভ রাগ থেকে কিছু গালাগালও ছিল।
৫ আগস্ট চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার করার কাজে নামে ৭ আগস্ট থেকেই। দুর্বৃত্তদের চালানো ভাঙচুরের জায়গা পরিষ্কার করার পাশাপাশি দেয়াল লিখন ও মোছার কার্যক্রম যেমন চালাচ্ছেন, তেমনই নতুন করে আর্টওয়ার্ক করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা উপজেলার মিরপুর, বাহুবল, পুটিজুরী, ডুবার বাজার, দিগম্বর বাজার, আলিফ সোবহান সরকারি কলেজ, বাহুবল কলেজ এলাকা পরিষ্কার করার কাজ শেষ করে আঁকাআঁকি চলছে। দেয়ালে তারা লিখছেন- ‘ঘুস চাইলেই ঘুসি’, ‘আবরার থেকে আবু সাঈদ তৈরি হচ্ছে লাখো শহিদ’, ‘এভরি জেনারেশন নিডস এ রিভোলেশন’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান।
শহরটা পরিচ্ছন্ন থাকলে আমাদের নিজেদেরই লাভ উল্লেখ করে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই দেশটাকে ভালোবাসি আমরা। এখানে এমনকিছু দেখতে চাই না, যার কারণে বিশ্ববাসীর সামনে আমাদের মানহীনতার পরিচয় বড় হয়ে দাঁড়াবে। এই যে আমরা সব শিক্ষার্থী এক হয়ে শহরটাকে গুছানোর কাজ করছি, সেটা নিজেদের জন্যই করা।’ এই দেয়ালগুলো এভাবেই থাকবে বিশ্বাস করেন তারা। বাহুবল বাজার এলাকায় এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দেশটাকে ভালো করে রাখব এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। এসব দেয়ালে আর আগের মতো অমুক ভাই, তমুক ভাই লেখার সুযোগ নাই।’
এই শিল্পকর্মের গুরুত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে চিত্রশিল্পী মিজান বলেন, ‘পৃথিবীতে ইতিহাস হয় অনেক। তারুণ্যের জেগে ওঠার ইতিহাস শুধু ইতিহাস হয়ে থাকে না, মানবতার সর্বকালের ইতিহাসে এর স্থান হয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্দমনীয় প্রতিবাদের সাহস আর প্রেরণা হিসেবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলন, আমাদের মিইয়ে যাওয়া, অনাকাঙ্ক্ষিত স্থিতি আর স্থবিরতাকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয়, চোখে আঙুল দিয়ে সত্যের মুখোমুখি করে, বিজয়ের পথে ধাবিত করেছে। বিপ্লব সব সময়েই আসে জনরোষের প্রবল উত্তাপের মধ্যে দিয়ে।’
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com