বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি :: বিগত ১৫ বছর ধরে প্রতিবছর ১৫ আগস্টের সকাল থেকে বিয়ানীবাজার পৌরশহরে মানুষের ঢল নামতো। শ্রদ্ধা, ফুলের ডালা, প্রার্থনায় সামিল হতে দলে দলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়ে চলাফেরাই ছিল দায়। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করতো উপজেলাবাসী।
প্রতিবছর ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগসহ তার অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তর, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর রেওয়াজ ছিল। কিন্তু এ বছর চিরচেনা দৃশ্যপট নেই বিয়ানীবাজারে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাইরে বের হননি। গত দেড় দশকে এই প্রথম দলটি শোক দিবসে এমন ‘নিরব’ কর্মসূচি পালন করছে।
উল্ঠো এই জনপদে বিএনপি-জামায়াতের সরব বিচরণ সাধারণ মানুষের নজর কেঁড়েছে। ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পৌরশহরে অন্তত: ১০টি মিছিল করেছে বিএনপি-জামায়াত, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকদল ও ছাত্রশিবির। এর আগে বুধবার ১৫ আগস্ট নিয়ে আইনশৃংখলা বিষয়ক এক প্রশাসনিক সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লবকে বয়কট করেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা। তারা তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্তাপন করেন।
পৌরশহরের উপজেলা কমপ্লেক্স ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই প্রধান প্রতিচ্ছবির সামনেও নেতাকর্মীদের আনাগোনা নেই, সুনসান নীরবতা, যেমন থাকে বছরের বাকি দিনগুলোতে। বিয়ানীবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কিংবা কোন পেশাজীবি সংগঠন এসব প্রতিচ্ছবিতে শ্রদ্ধা জানাতে যায়নি। তবে বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেনের নেতৃত্বে তার অনুসারী কিছু নেতাকর্মী সকালে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন বিলাল (৩৫) নামের একজন কর্মী। তিনি বলেন, অন্যান্য বছর ১৫ আগস্টের পরদিন ফুলের ঢালা পরিষ্কার করতে ২-৩টি ট্রাক লাগতো। এ বছর তেমন কিছু দেখা যাচ্ছেনা।
একই ধরনের কথা বলেন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পাশের এক ব্যবসায়ী জালাল আহমদ। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে এখানে গাড়ির পার্কিং করার জায়গা থাকতো না, ভোর বেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী এখানে আসতো। কিন্তু আজ কোনো ভিড় নেই।
১৯৭৫ সালের এই দিনে এক দল বিপথগামী সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবার হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও এই দিনে তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব; তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল; পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, সামরিক সচিব জামিলউদ্দিন আহমেদ, এসবি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও হত্যা করে ঘাতকেরা।
দীর্ঘদিন ধরে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com