১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

add

‘সবকিছু আর খাতায় উল্লেখ করা যায় না, কিছু জিনিস নিজেদের করতে হয়’

todaysylhet.com
প্রকাশিত ২০ আগস্ট, মঙ্গলবার, ২০২৪ ০৩:০১:৪৫
‘সবকিছু আর খাতায় উল্লেখ করা যায় না, কিছু জিনিস নিজেদের করতে হয়’

সিলেট রেলওয়ে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাছ চুরির অভিযোগ

এহিয়া আহমদ :: কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়া সরকারি গাছ কাটা ও গাছ বিক্রির অভিযোগ ওঠেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেটের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মোহাম্মদ রেজাউল হকের বিরুদ্ধে। রবিবার সিলেটের রেলওয়ে স্টেশনের সামনে থেকে রেইনট্রি গাছসহ ছোট-বড় বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে ভ্যান গাড়িতে করে স্টেশনের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় ভ্যান চালকসহ গাছগুলো জব্দ করা হয়।

 

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও কর্মকর্তাদের অভিযোগ, অসৎ উদ্দেশ্যে গাছগুলো কাটেন বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেটের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মোহাম্মদ রেজাউল হক। কাটা ওই গাছগুলোর মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকার বেশি। তবে মোহাম্মদ রেজাউল হক দাবি করেন, তিনি গাছ কাটার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়েছেন। যদিও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, তারা গাছ কাটা কিংবা বিক্রির বিষয়ে কিছু জানেন না। অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না। আমাদের কাছে গাছ কাটা কিংবা গাছ বিক্রি জন্য কেউ কোনো ধরনের অনুমতি নেননি।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে সিলেট রেলওয়ে এলাকা থেকে একটি ভ্যানগাড়িতে করে কিছু গাছ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময় খবর পেয়ে স্থানীয় রেলওয়ে নিরাপত্তা কর্মীরা এগিয়ে আসেন এবং ভ্যান চালককে আটক করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে বলেন। ওই সময় আবু সাঈদ নামের ভ্যানচালক বলেন, তার কাছে কোনো কাগজপত্র নেই। এই গাছগুলো কার? তখন জানতে চাইলে তখন তিনি বলেন, রেলওয়ের আইডব্লিউ মোহাম্মদ রেজাউল হক, মো. হানিফ, মাসুদ মিয়া, পলাশসহ আরও দুই জন নতুন কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি এই গাছগুলো নিয়ে সমিলে যাচ্ছিলেন।

 

গাছ কাটার ব্যপারে রেলওয়ে কর্মচারী ওসমান গনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, ‘স্টেশন মাস্টারের নির্দেশে আমি গাছ কেটেছি। পরে এলাকাবাসী কর্তন করা নিম গাছটি আটক করে।’

 

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এএসআই রুবেল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ আইডব্লিউ বিভিন্ন প্রকার মালামাল বিক্রি করে আসছেন। এ তথ্য আমাদের কাছে ছিল। আজও একই উদ্দেশ্যে গাছগুলো নিয়ে যাওয়ার সময় গাছসহ ভ্যানচালককে আটক করা হয়।

 

বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) সিলেট চৌকির ইনচার্জ মো. এনায়েত করিম বলেন, ‘আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমাদের রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য কাওছার মিয়া আমাকে জানায় যে, ‘আইডব্লিউ মোহাম্মদ রেজাউল হক তার অফিসের সামনে থেকে কিছু গাছ অবৈধভাবে কর্তন করে বিক্রি করতেছেন। কোনো রেলওয়ে থেকে মালামাল নিলে গেইট পাস দিতে হয় এবং টেন্ডারের ভিত্তিতে নিতে হয়। কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই তিনি অবৈধভাবে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় আমাদের কাছে অভিযোগ আসে, বর্তমান এই পরিস্তিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি প্রতি রাতে গাছ চুরি করে বিক্রি করতেন। রবিবার মোহাম্মদ রেজাউল হকের নেতৃত্বে ভ্যানগাড়িতে করে অবৈধভাবে গাছ কর্তন করে বিক্রির উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে হাতেনাতে ভ্যানচালক আবু সাঈদকে আটক করা হয়।’

 

ভ্যান চালক আবু সাঈদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আইডব্লিউ মোহাম্মদ রেজাউল হকের নির্দেশে রেলওয়ে কর্মকর্তা ৫ জনের মধ্যে মো. হানিফ, মাসুদ মিয়া, পলাশসহ আরও ২জন কর্মকর্তা মিলে পূর্বের কর্তনকৃত গাছগুলো সকালে বিক্রির উদ্দেশ্যে স’মিলে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার গাড়িতে তুলে দেন।’

 

বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেটের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মোহাম্মদ রেজাউল হক জানান, ‘কর্তনকৃত গাছগুলো অন্য এক জায়গা থেকে কাটা হয়েছিল, আমরা শুধু উদ্ধার করে নিয়ে আসছি। সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আজমাইনের মৌখিক অনুমতি নিয়েছি। সরকারি গাছ পড়ে থাকলে তো পঁচে যাবে, আমাদের কিছু কিছু কাজ আমরাতো করতে পারি। সে জন্যই গাছগুলো নেওয়া। আমি ওনারবোর্ড তৈরি করার জন্য গাছগুলো নিয়েছি। যারা নিচ্ছে, তারা আমাকে বলে নেয় নাই। তবে আজকে নেওয়ার কথা ছিল। আমি আমাদের এখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করাচ্ছি। যে গাছগুলো রাখা আছে, সেগুলো কোরবানি ঈদের পরে ওই এলাকার লোকজন এবং মাদরাসার কিছু লোকজন গাছগুলো কেটে ছিলেন।’ গাছগুলোর হিসেব সরকারি খাতায় উল্লেখ নেই কেন?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবকিছু আর খাতায় উল্লেখ করা যায় না, কিছু জিনিস নিজেদের করতে হয়। আসলে এই অফিসে ওনারবোর্ড নেই, তাই ওনারবোর্ড বানানোর জন্য এটা করা। ওনারবোর্ড তো আর আমি সাথে করে নিয়ে যাবো না। আর এটা সিলেট রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আজমাইন মাহতাবের নির্দেশে আমি গাছগুলো স’মিলে পাঠানোর সময় নিরাপত্তা বাহিনী আটক করে।’

এ ব্যাপারে সিলেট রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আজমাইন মাহতাবের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেন নি।