নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটে গত ১৫ বছর ধরে চলছিলো অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনাানি। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন বা ঠেকাতে সড়কে সে সময়ের ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকর্মীর হাতে দেখা গিয়েছিলো অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রও। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন বা ছবি প্রকাশ হলেও তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি আইনি ব্যবস্থা। ফলে আতঙ্কে ছিলেন নগরবাসী।
তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও বহনকারীদের গ্রেফতার করতে চলছে সিলেটে অভিযান। এতে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে জনমনে।
শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের দিন (৫ আগস্ট) সিলেটসহ সারা দেশের প্রায় প্রত্যেকটি থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অস্ত্রসহ জিনিসপত্র লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। এসব অস্ত্র ফিরে পেতে গত ৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় বর্তমান নির্দলীয় সরকার। এছাড়া গত ১৫ বছরে বেসামরিক লোকজনকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স গত ২৫ আগস্ট স্থগিত করে বর্তমান সরকার। এসব অস্ত্রও জমা দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের পরে অজমাকৃত অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান হবে মর্মে সিলেটে প্রতি উপজেলায় মাইকিং করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে লাইসেন্স বাতিল হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের ভেতরে ৫৯টি ছাড়া বাকিগুলো জমা পড়েছে। এগুলো উদ্ধারে যৌথ অভিযান এখনো শুরু হয়নি। এ বিষয়ে রবিবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মিটিং করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। এ বৈঠকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
অপরদিকে, লাইসেন্স বাতিল হওয়ার আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেলেও ৫ তারিখ লুট হওয়া অস্ত্রের সঠিক সংখ্যা পুলিশ দিতে পারেনি। এসব অস্ত্রের মধ্যে কতগুলো জমা পড়েছে সে পরিসংখ্যানও দেয়নি পুলিশ। এসব অস্ত্রও উদ্ধারের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ হবে রবিবারের বৈঠকে।
এদিকে, সিলেটে যৌথ অভিযান শুরু না হলেও অবৈধ সব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পৃথক অভিযান শুরু করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯। ইতোমধ্যে তারা পুলিশের লুট হওয়া একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতারও করেছে র্যাব-৯ এর একটি টিম।
জানা যায়, র্যাব-৯ এর একটি টিম শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে সিলেট মহানগরের মিরাবাজার এলাকার আগপাড়ায় অভিযান চালিয়ে রাজীব হোসেন নামের একজনের বাসা তেকে নাইন এমএম একটি পিস্তল উদ্ধার করে। সঙ্গে ৭ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন ও কিছু ভারতীয় মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। এসময় রাজীবকে পাওয়া গেলেও রাত ৯টার দিকে তাকেও গ্রেফতার করে র্যাব। পরে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হোস্টেলের কয়েকটি কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু দেশিয় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। খবর পেয়ে সেনাবিহনীর একটি টিম সেখানে যায় এবং অস্ত্রগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
যৌথ বাহিনীর অভিযান নিয়ে সিলেটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুবর্ণা সরকার শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে বলেন- সিলেট জেলা ও মহানগরে লাইসেন্স বাতিল হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের ভেতরে ৫৯টি ছাড়া বাকিগুলো জমা পড়েছে। এগুলো উদ্ধারে যৌথ অভিযান এখনো শুরু হয়নি। এ বিষয়ে আগামীকাল (রবিবার) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মিটিং করা হবে। এতে সেনাবাহিনী, র্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এ বৈঠকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন- অজমাকৃত ৫৯টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৩টি ছাড়া বাকিগুলো মহানগরের। তাই এগুলো উদ্ধার-অভিযানে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ভূমিকা বেশি থাকবে। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান তদারকি করবেন।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আরও বলেন- যৌথ অভিযান শুরু না হলেও র্যাব ইতোমধ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে। শনিবার আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে তারা অবগত করেছে। আর সিকৃবিতে দেশিয় উদ্ধারের বিষয়টি মূলত সেনাবাহিনীর অভিযান ছিলো না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের শিক্ষার্থীহল পরিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে কয়েকটি তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে বেশ কিছু ধারালো অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী সেখানে যায়।