২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

add

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ : রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখাসহ সরকারের যত পদক্ষেপ

todaysylhet.com
প্রকাশিত ১১ সেপ্টেম্বর, বুধবার, ২০২৪ ২২:০৮:৫৬
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ : রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখাসহ সরকারের যত পদক্ষেপ

টুডে সিলেট ডেস্ক :: রাষ্ট্র সংস্কারে অংশ হিসেবে ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসব কমিশন নির্বাচন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কাজ করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন খাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কেও বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ছয়টি কমিশন প্রধানদের নাম ঘোষণা করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফরাজ চৌধুরী, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো আমার সরকারের কারও সঙ্গে কথা হয়নি। বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে জেনে তারপর মন্তব্য করব। তবে আমি সম্মানিত বোধ করছি।’

কমিশন গঠনের কারণ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনো গোষ্ঠীর কাছে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আশঙ্কা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি। নির্বাচনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।

এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলেও জানান তিনি। তিন বলেন, কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শ সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এটি (পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন) পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করছি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শসভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।

লুটপাট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, লুটপাট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটা ব্যাংকিং কমিশনও গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এক মাসে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আমরা এই খাতে নিয়ম নীতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আরও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে।

সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সংস্কার করা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন। একটা জাতির সংস্কার শুধু সরকারের সংস্কার হলে হয় না। আপনি ব্যবসায়ী হলে আপনার ব্যবসায় সংস্কার আনুন। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীরা তাদের নিজ নিজ সমিতির মাধ্যমে সংস্কার আনুন। সমিতিতে সংস্কার আনুন। নতুন করে সমিতির গঠনতন্ত্র সংশোধন করুন। আপনি শ্রমিক হলে আপনার ক্ষেত্রে আপনি সংস্কার করুন। আপনি রাজনৈতিক নেতা–কর্মী হলে আপনার ক্ষেত্রে সংস্কার করুন। আপনি প্রতিষ্ঠান প্রধান হলে আপনার প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনুন। আমি এটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

দেশবাসীর প্রতি আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব। আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোন কাজ কেউ কোনো ভাবেই করবেন না।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার উদ্যোগের কথাও জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স সাড়ে বারো বছরের কম ছিল, তাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিলের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন বেদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সাংবাদিক সাগর–রুনি হত্যাকাণ্ডসহ বহুল আলোচিত ৫ হত্যাকাণ্ডে অগ্রাধিকার দেওয়া জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সন্ত্রাস দমন আইন ও ডিজিটাল/সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তাসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান সব কালো আইনের তালিকা করা হয়েছে। এ সব কালো আইন বাতিল ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ বহুল আলোচিত ৫টি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

গণ–অভ্যুত্থানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করার উদ্যোগের কথা পুনর্ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, সব আহত শিক্ষার্থী–শ্রমিক–জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হাল নাগাদ করা হতে থাকবে।

গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার গঠিত ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ সব শহীদ পরিবার এবং আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছে। এই ফাউন্ডেশনে দান করার জন্য দেশের সব মানুষ এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

গত মাসে কুমিল্লা–নোয়াখালী–সিলেট অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় সাধারণ মানুষ, সশস্ত্র বাহিনী এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
এখন ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেসব ভাই–বোনেরা তাঁদের গত ১৬ বছরের বেদনা জানিয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য আমার অফিস এবং সচিবালয়ের অফিস সমূহের সামনে প্রতিদিন ঘেরাও কর্মসূচি দিয়ে আমাদের কাজকর্ম ব্যাহত করছিলেন তাঁরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি থেকে বিরত হয়েছেন বটে, তবে অন্যত্র আবার কর্মসূচি দিয়ে যাতায়াতে ব্যাঘাত ও সৃষ্টি করেছেন। আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের ন্যায্য আবেদনের কথা ভুলে যাব না। আমরা সব অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের দায়িত্বকালে যথাসম্ভব সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। আমি আবারও অনুরোধ করছি, আপনারা যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন। জাতি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

ঢাকার সাভারে পোশাক ও ওষুধ শিল্প কারখানায় চলমান শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প এলাকায় শ্রমিক ভাই–বোনেরা তাঁদের অভিযোগ জানানোর জন্য ক্রমাগতভাবে এই শিল্পের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছেন। এটা আমাদের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা মোটেই কাম্য নয়। এমনিতেই ছাত্র-শ্রমিক জনতার বিপ্লবের পর যে অর্থনীতি আমরা পেয়েছি সেটা নিয়ম নীতিবিহীন দ্রুত ক্ষীয়মাণ একটা অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এই অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্যোগে সাড়াও পাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে আমাদের শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে, অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে। সেটা কিছুতেই কারও কাম্য হতে পারে না।

তিনি বলেন, শ্রমিক ভাই–বোনদের অনেক দুঃখ আছে। কিন্তু সেই দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে আপনাদের মূল জীবিকাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সেটা ঠিক হবে না। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস প্রাপ্ত হলে সেটা ঠিক হবে না। মালিক-মালিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব সমস্যার সমাধান আমরা অবশ্যই বের করব। আপনারা কারখানা খোলা রাখুন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখুন। দেশের অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিন। আমরা আপনাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করব।

এই শিল্প নিয়ে সরকারের ভাবনা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ওষুধ শিল্প এবং তৈরি পোশাক শিল্প দেশের গৌরব। এর মাধ্যমে আমাদের শ্রমিক ভাই–বোনেরা ও তাদের কর্ম কুশলতা বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে। এর সাফল্য এখন থমকে আছে। আমরা এই দুই শিল্পকে তাদের সম্ভাব্য শীর্ষে নিয়ে যেতে চাই। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের একত্রিত করে তাঁদের সহযোগিতা চাইব যেন বাংলাদেশের এই শিল্প দুটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে বেশি আস্থাযোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে পারে। সরকারের দ্বিতীয় মাস থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি হিসেবে নতুন শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের সূচনা করতে চাই।

তিনি বলেন, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনকে দমন করতে যেসব ফৌজদারি মামলা করা হয়েছিল এর মধ্যে হত্যা মামলা ছাড়া বাকি প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার সবাই মুক্তি পেয়েছেন।

বিচার বিভাগে সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগের বড় সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। যোগ্যতম ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়াতে মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ, অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ সহ অনেকগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ এবং অন্যান্য নিয়োগ সবকটাই সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা বলপূর্বক গুম থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে স্বাক্ষর করেছি। ফলে স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত “গুম সংস্কৃতি”-র সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। এ ছাড়া আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য পৃথক একটি কমিশন গঠন করছি। যে-সব পরিবার তাদের নিখোঁজ পিতা, স্বামী, পুত্র এবং ভাইদের পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণার সঙ্গে অপেক্ষা করছেন, আমরা আপনাদের বেদনায় সমব্যথী। আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং সেই সঙ্গে বের হয়ে আসছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের গুমের শিকার ভাইবোনদের কষ্ট ও যন্ত্রণা গাথা।

শিক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতে যেন উজ্জ্বল হয় সেটা নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আমাদের পূর্ণ নজর রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। বই সংশোধন এবং পরিমার্জনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের উচ্চ প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ডে দখলদারির রাজনীতি বন্ধ করার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্যে করেছেন আমাদের প্রথম মাসে দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য মহোদয়গণ পদত্যাগ করেছেন। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এটা বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। প্রথম মাসে আমরা ক্রমাগতভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। এর ফলে সকল সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি, আপনারা মন খুলে আমাদের সমালোচনা করেন। আমরা সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিডিয়া যাতে কোনো রকম বাধা বিপত্তি ছাড়া নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে সে জন্য একটি মিডিয়া কমিশন গঠন করা সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন। আরও যে-সব কমিশন সরকারসহ অন্য সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারে, আমরা তাদের পুনর্গঠন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি যাতে তারা আরও শক্তিশালী হয়, জনকল্যাণে কাজ করে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা ভারত এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমূহের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তবে সেই সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে। ভারতের সঙ্গে আমরা ইতিমধ্যে বন্যা মোকাবিলায় উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আলোচনা শুরু করেছি। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমি SAARC রাষ্ট্র গোষ্ঠী পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। চলমান এবং প্রস্তাবিত সকল উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর যাচাই বাছাই করার কাজ ইতিমধ্যে আমরা শুরু করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায় বিবেচনা করে বাকি কাজে ব্যয়ের সাশ্রয় এমনকি প্রয়োজনবোধে তা বাতিল করার কথা বিবেচনা করা হবে। দেশের মানুষকে আর ফাঁকি দেওয়া চলবে না। কর্মসংস্থান তৈরি করবে এমন প্রকল্পগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার দেব।

ড. ইউনূস বলেন, লুটপাট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটা ব্যাংকিং কমিশনও গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এই এক মাসে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আপনারা নিশ্চয় সেটা লক্ষ্যে করেছেন। আমরা এই খাতে নিয়ম নীতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আরও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। প্রথম মাসের কাজ হিসেবে শুধু প্রধান কাজগুলি করেছি।

তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পলিসি সুদের হার বৃদ্ধি করে ৯ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ সুলভ মূল্যে প্রান্তিক মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ চলমান রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরে চাল ও গম আমদানির জন্য ৫,৮০০ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের জন্য ৮,৯০০ কোটি টাকা এবং খাদ্য ভর্তুকির তিনটি প্রোগ্রামের জন্য ৭,৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে করণীয়সমূহ চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সরকারের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় যৌক্তিক পরিমাণে হ্রাস করার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য সার আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত চাষিগণ যাতে কৃষিঋণ পেয়ে থাকেন তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি কৃষিঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট চাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিশ্ব ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, জাইকা থেকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রিমের অর্থ পরিশোধ এবং বকেয়া পাওনা নিয়ে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আলোচনা চলছে।

পাইপলাইনে থাকা ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট বন্ধের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে রাশিয়া এবং চীন থেকে প্রাপ্ত ঋণের সুদের হার কমানো এবং ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সকল উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সকল অর্থনৈতিক সূচক এবং পরিসংখ্যানের প্রকৃত মান বা সংখ্যা প্রকাশের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জিডিপি, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদির সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ, প্রাক্কলন এবং প্রকাশের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অর্থ বিভাগের রাজস্ব আয় সম্পর্কিত উপাত্তের মধ্যে পার্থক্য নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত রপ্তানি আয় নিরূপণ এবং প্রকাশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অটোমাইজেশনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুঁজি বাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য ব্যবসায়ী, শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে সভা করা হয়েছে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিদ্যমান মজুত ও ঘাটতি মূল্যায়ন করে ও ভবিষ্যৎ চাহিদা পর্যালোচনা করে স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে বিভিন্ন জটিলতা দূরীকরণ, বন্দর ও বড় মোকামসহ পরিবহন ব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, দপ্তর, বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তেল, চিনি, ডিম ও মাংস উৎপাদনকারী বৃহৎ প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সভা ও মতবিনিময় করা হয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যাদি, যেমন পেঁয়াজ, আলু এসবের দাম আরও কমানোর জন্য বিদ্যমান শুল্কহার হ্রাসের বিষয়ে এনবিআরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এনবিআর পেঁয়াজ, আলু ও কতিপয় কীটনাশকের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক হ্রাস ও ক্ষেত্রবিশেষে রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহার করে এসআরও জারি করেছে। নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে হ্রাসকৃত মূল্যে কিছু পণ্য, যেমন পরিবার প্রতি চাল মাসে ৫ কেজি, সয়াবিন তেল মাসে ২ কেজি ও মসুর ডাল মাসে ২ কেজি দেওয়া হচ্ছে। এটি সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত রাখা হবে।

সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় হতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীন চলমান সকল প্রকার নেগোসিয়েশন, প্রকল্প বাছাই এবং ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। গত দেড় দশকে এই আইন ব্যবহার করে লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কোম্পানিসমূহে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনার লক্ষ্যে কোম্পানিসমূহের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। প্রকৌশল, ভূতত্ত্ব ও খনিজ এবং হিসাব বিষয়ে অধ্যয়ন করেছে এমন ছাত্র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ খাতে অধিকতর সক্ষমতা, গতিশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জ্বালানি তেলের মূল্য জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সহনশীল রাখতে অকটেন ও পেট্রলের দাম ৬ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১.২৫ টাকা কমানো হয়েছে। ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২৫ আগস্ট হতে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন ছাড়া বাকি সব স্টেশনে মেট্রোরেল পুনরায় চালু করা হয়েছে।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স সাড়ে বারো বছরের কম ছিল, তাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকা হতে বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিলের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন বেদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন এর খসড়া তৈরির কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প ও ঢাকার আশপাশে স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের রোডম্যাপ চূড়ান্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিধিবহির্ভূত প্রদত্ত প্লট ও ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ছাত্র, শ্রমিক, জনতার বিপ্লবের মূল লক্ষ্যে ছিল গণভবন। এটা ছিল স্বৈরাচারের কেন্দ্রবিন্দু। এই সরকার বিপ্লবের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গণভবনকে বিপ্লবের জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ছাত্র-জনতার ক্ষোভকে স্থায়ীভাবে তুলে ধরার জন্য গণভবনের আর কোনো সংস্কার করা হবে না। ছাত্র-জনতার ক্ষোভের মুখে তা যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল সে অবস্থায় তাকে রাখা হবে। যে-সব মূল্যবান সামগ্রী জনতা নিয়ে গিয়েছিল সেগুলো অনেকে ফেরত দিয়ে গেছে। যারা নিয়ে গিয়েছিল তারা নিজেরাই ফেরত দিয়ে গেছে। তাদের আমরা দেশবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আরও কিছু জিনিস পাওয়া যায়নি। যারা নিয়ে গেছেন তাদের কাছে অনুরোধ করব তারা যেন এসব সামগ্রী ফেরত দিয়ে যান। আমার উল্লেখ করব যে এসব বিক্ষুব্ধ জনতা নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু বিজয়ের পর তারা আবার জাদুঘরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এগুলো ফেরত দিয়ে গিয়েছে।

আমরা নতুন বাংলাদেশকে একটি পরিবেশবান্ধব এবং জীব বৈচিত্র্যময় দেশ হিসাবে গড়ে তলার উদ্যোগ নিয়েছি। এটি তরুণদের আকাঙ্ক্ষা। আমাদের সবারই আকাঙ্ক্ষা। সেই লক্ষ্যে আমি প্রথমেই একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার বাসভবন ও সমগ্র সচিবালয়ে প্লাস্টিকের পানির বোতল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি। ইতিমধ্যে সুপার শপ গুলোতে পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক দশকে যে পরিমাণ নদী দূষণ হয়েছে, আমরা তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি।

দেশবাসীর প্রতি ড. ইউনূস বলেন, আমরা সংস্কার চাই। আমাদের একান্ত অনুরোধ, আমাদের ওপর যে সংস্কারের গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা একসঙ্গে সংস্কার করব। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব।

সমাজের সব স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজনও সরকার অনুভব করছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।

সবশেষ তিনি বলেন, ধৈর্য ধরুন এই কথাটি আমি মোটেই আপনাদের বলব না। আমরা সবাই অধৈর্য হয়ে পড়েছি—এতসব কাজ কখন যে শেষ হবে এটা চিন্তা করে। আমরা অধৈর্য হব। কেন হব না! কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করব। কাজে কোনো অধৈর্যের চিহ্ন রাখব না।