টুডে সিলেট ডেস্ক :: শরৎ মানেই কাশ, শরৎ মানেই সাদা। দুটো অভিন্ন, একে অপরে বাঁধা। এর মাঝেই যেন রয়েছে কাশ সম্পর্কিত সব প্রশ্নের উত্তর। এগুলোই কেউ কাউকে ছেড়ে নয়। সবগুলোই একই সূত্রে গাঁথা। শরৎ এলেই কাশফুল আসে। ফুলের শুভ্রতামাখা তুলাটে অংশে ভরে উঠে তার যৌবন। যা দূর থেকে প্রকৃতি আর ফুলপ্রেমীকে আকর্ষণ করে থাকে দারুণভাবে। এই শুভ্রতার অংশটুকুই কাশের বিশেষ বৈচিত্র্য। ফুলরাজ্যের সব ফুল থেকে তাকে এভাবেই সুসজ্জিত করে রেখেছে।
চা বাগান মানেই – টিলা, পাহাড়, ছড়া, জলাধারের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম সংমিশ্রণ। যেখানটাতে প্রাণভাবে টাটকা নিশ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায় বারবার। যার টানে বারবার ছুটে যেতে চায় মন! চা বাগানের ছড়ার পাশেই কাশফুলের প্রস্ফুটিত হয়। গভীর সৌন্দর্য ছড়ায় কাছে দূরে। মেলে ধরেছে আপন রূপ প্রকৃতিপ্রেমীদের ডাকছে কাছে। শরৎ শুভ্রতা আর প্রকৃতির রূপের বন্দনায় গা ভাসাতে দলবেঁধে অনেকেই সেখানে যাচ্ছেন বেড়াতে। কেউ কেউ যাচ্ছে একাকি।
শরৎকে বলা হয় ঋতুর রানি। শরতের অন্যতম আরেকটি আকর্ষণ কাশফুল। কাশফুল ছাড়া যেন শরতের এই আগমন অসম্পূর্ণ। নদীর পাড় ঘেঁষে দেখা মিলে এই কাশফুলের। প্রতি বছর চা বাগানের ছড়া ধারে ধারে ফুটে ওঠে কাশফুল।
নদীর তীর তো বটেই, পড়ে থাকা জমিনও ঢেকে যায় শ্বেতশুভ্র কাশফুলে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখা দেয় কাশফুল। নরম পালকের ন্যায় ধবধবে সাদা কাশফুল পাতার ফাঁকে ফাঁকে বাতাসের দোলায় নুইয়ে পড়ে। কখনও দূর থেকে দূরে বাতাসে ভর করে উড়ে বেড়ায় এসব কাশফুল।
ছড়া বা নদীর কাছেই কাশফুলের বেড়ে উঠার জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থান। এসব নদীর পাড়ে জমে থাকা পলিমাটিতে খুব সহজে বেড়ে উঠে কাশফুলের গাছ। কাশফুলের এই আলাদা বৈচিত্র্যতার জন্য শরতের নীল আকাশে শুভ্র কাশ ফুলের ছোঁয়া প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে কাশফুলকে করে তুলেছে অন্যন্য।
ঋতু চক্রে আসা শরতের পুরো সময়জুড়েই দেখা মিলে কাশফুলের। শুভ্রতার ছোঁয়ায় প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে নিজ আঙ্গিকে। যুগে যুগে প্রকৃতিও নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে শরতের শুভ্রতায়। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। যদিও প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে কাশবন। তবে কোথাও কাশফুল ফুটলে প্রকৃতিপ্রেমীদের ঢল নামে সেখানে।
বর্ষা শেষে শরৎ আসে বলেই গাছের পাতারা হয় আরও স্নিগ্ধ এবং সজীব। ঋতুর রানি শরতের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ কাশফুল। আকাশে ধবধবে সদা মেঘের শতদল আর মাটিতে মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুল যে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য ছড়ায় তাতে থাকে শুধুই মুগ্ধতা।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেঘের সাথে সূর্যের লুকোচুরিতে সেই কাশফুল বারবার দোল খায়। এ যেন শরতের মায়াময় প্রকৃতির অপূর্ব শোভা। মেঘের ঋতু শরৎ শুভ্রতা, স্বচ্ছতার প্রতীক। আর এই শুভ্রতা মানুষের মনকে করে প্রশান্ত।
কাশফুলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum spontaneum। এরা ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। চিরল পাতার দু’ধারে খুবই ধার। পালকের মতো নরম এর সাদা ফুল। শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহার করা হয়। মূল ব্যবহার হয় ওষুধি হিসেবে। কাশফুলের বেশ কিছু ওষুধিগুণ রয়েছে।
যেমন- পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পিত্তথলির পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। শরীরের রং হলে উঠে দিনদিন শুভ্র। এছাড়াও শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যাবহৃত হয়।
গভীর আক্ষেপের বিষয় আমাদের চারপাশের প্রকৃতি আগের মতো ভালো নেই। সুস্থ ও প্রাণপূর্ণ নেই। পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে এখন শরতের অপরূপ মাধুর্য এখন আর আগের মতো ধরা পড়ে না। তবুও ঋতুচক্রের আবর্তনে ফিরে ফিরে আসে শরৎ। ফিরে ফিরে আসে শুভ্রতা মাখানো শুভ্রতার স্নিগ্ধ কাশফুল।