সিকৃবি প্রতিনিধি :: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) বিতর্কিত ভিসি প্রফেসর ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা। তাঁর পদত্যাগের পর দীর্ঘ প্রায় এক মাস পার হতে চললেও নতুন ভিসি পায়নি সিকৃবি।এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি নিয়োগ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর কে হচ্ছেন পরবর্তী ভিসি সেটাই এখন গুরুত্ব পাচ্ছে সর্বাগ্রে। ইতোমধ্যে এই পদে আগ্রহী শিক্ষকরা দৌঁড়ঝাঁপও শুরু করেছেন। এ তালিকায় আছেন জামাল ভূঞার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা জামায়াত ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকরাও।
এখন পর্যন্ত যাঁদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জামায়াতপন্থী শিক্ষক মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. এটিএম মাহাবুব ইলাহী, মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ প্রফেসর ড. সুলতান আহমদ এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন ফার্মাকোলজি ও টক্সিকোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. ছিদ্দিকুল ইসলাম, পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এম. রাশেদ হাসনাত, প্যাথলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমান ও প্রাণী পুষ্টি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. এমদাদুল হক।
এছাড়া ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা সিলেট ভেটেরিনারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিকৃবি’র প্যাথলজি বিভাগের প্রফেসর ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছাড়াও বিএনপি ও আওয়ামী উভয় সরকারের আমলে সুবিধাভোগী বামপন্থী হিসেবে পরিচিত মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেমের নামও আসছে আলোচনায়।
সিকৃবির এই আট শিক্ষকের বাইরেও নাম এসেছে আরও তিনজনের। তাদের সবাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, কৃষি স¤প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার ও এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের প্রফেসর ড. মুজিবুর রহমান। এদের মধ্যে প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম সর্দার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রফেসর ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিসি হওয়ার দৌঁড়ে থাকা প্রফেসর ড. এটিএম মাহাবুব ইলাহী জামায়াতপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী সরকারের আমলে তিনি পদত্যাগি ভিসি জামাল ভুইয়ার ঘনিষ্ট ছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে পিএইচডি করা এই সিনিয়র শিক্ষক পেশাদার পশু চিকিৎসকের মতো নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন। এই সুবাদে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সিলেট ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষক থাকাবস্থায়ই আরিফের পশু খামারে চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভেট কেয়ার নামে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান চালানোর অভিযোগ আছে।
প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদও জামায়াতপন্থী শিক্ষক। তিনি জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের শ্যালক। প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা নেই তার।
আর বিএনপিপন্থী শিক্ষক প্রফেসর ড. এম. রাশেদ হাসনাত একবার সিকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ছিলেন। পাবনার বাসিন্দা ড. হাসনাত ক্যাম্পাসে বিএনপির হাইব্রিড হিসেবে পরিচিত। যার ছাত্রজীবন শুরু হয়েছিলো ক্রীড়া কোটায় পিতা শিক্ষক হওয়ার সুবাদে। শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সাথে মিলেমিশে। বিএনপি পন্থী এ্যাব সিকৃবি শাখার এই সভাপতি আওয়ামী সরকারের আমলে শুদ্ধাচার কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমানের যথেষ্ট সুনাম থাকলেও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা নেই তাঁর।তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার অভিযোগ রয়েছে।
বিএনপিপন্থী আরেক শিক্ষক বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের একাধিক বারের সভাপতি ও ভেটেরিনারি, এনিম্যাল ও বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন প্রফেসর ড.ছিদ্দিক ভিসির অনুপস্থিতিতে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়ে ভিসির মতো ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এজন্য তিনি একক সিদ্ধান্তে প্রক্টর পদে ড. মোজাম্মেল হককে, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক পদে ড. এমদাদুল হককে এবং রেজিস্ট্রার পদে ড. আতাউর রহমানকে নিয়োগ দিয়েছেন। ক্যাম্পাসে আলোচনা রয়েছে এই তিনজনের নিয়ন্ত্রণেই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়।
আরেক শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. এমদাদুল হক। বঙ্গবন্ধু ফেলোশীপ নিয়ে পিএইচডি করা এই শিক্ষক বিগত সময়ে অনেক কেলেংকারীতে জড়িত হলেও সুবিধা নিয়েছেন সদ্য সাবেক ভিসির আস্থাভাজন হিসেবে। বিএনপি সরকারের আমলে প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক প্রফেসর ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল সিলেট ভেটেরিনারি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। রেজিস্ট্রার পদেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা এই শিক্ষক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বঙ্গবন্ধু ভেটেরিনারি পরিষদের নেতা হিসেবে নানা সুযোগ সুবিধা নেন। চার দলীয় জোট সরকারের আমলেও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েক নেতার আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে নানা সুবিধা নেন। তার বিরুদ্ধে আর্থিক নয়-ছয়'র অভিযোগ আছে। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের পর ১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের হিসেবে গড়মিল থাকায় এটি শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়। বর্তমানে তিনি প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।
বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত প্রফেসর ড. আবুল কাশেমের এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্সে দ্বিতীয় বিভাগ থাকা সত্তে¡ও তেলবাজির মাধ্যমে তিনি ও রয়েছেন ভিসির দৌড়ে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২১ আগস্ট পদত্যাগ করেন আওয়ামী সরকারের আমলে একছত্র ক্ষমতার অধিকারী দুর্নীতির বরপুত্র জামাল উদ্দিন ভূঞা। ওই দিনই ডিন কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রফেসর ড. মো. ছিদ্দিকুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়।
সাধারণ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সঠিক ভাবে পরিচালনার স্বার্থে একজন সৎ যোগ্য প্রার্থীকে যেন ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com