জৈন্তাপুর প্রতিনিধি :: জৈন্তাপুর উপজেলায় বড়গাঙ নদীতে ইজারাকৃত সীমানার বাহির ও বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন ১৮০ ফুট ভিতর স্হান হতে বালু উত্তোলনের ফলে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বেড়ীবাঁধের তিন কিলোমিটার অংশ। এতে করে চরম শঙ্কায় দিন কাটছে বেঁড়ীবাধের ভিতরে স্হায়ীভাবে বসবাসরত কয়েক হাজার বাসিন্দা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিজপাট ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত পূর্ব লক্ষিপ্রাসাদ গ্রামের তিন কিলোমিটার অংশজুড়ে বালু উত্তোলনের ফলে বড় একটি অংশ ইতিমধ্যে ধসে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সারী গোয়াইন বেড়ীবাঁধ প্রকল্পের নামে বড়গাঙ ও সারীনদী সংলগ্ন ১৭ কিলোমিটার অংশজুড়ে বিশাল বেঁড়ীবাধ নির্মান করা হয়। এই বেঁড়ীবাধ ১ নং নিজপাট ইউনিয়ন ও ২ নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নে মোট ৭টি ওয়ার্ডের মানুষের বসতভিটা ও আবাদি জমি পাহাড়ি ঢল থেকে সৃষ্ট বন্যায় নিরাপদ রাখার জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছিলো।
কিন্তু ১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্কারী বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ফেরিঘাট ব্রীজের ২০০ মিটার পূর্বে বিশাল এক অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। যার ফলে বাঁধের ভিতরে বসবাসকারী মানুষের ঘরবাড়ীর ব্যপক ক্ষতির পাশাপাশি শত শত গবাদিপশুর প্রানহানীর ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এই অংশটি সংস্কারে ১৯৯০ সালে পূর্ব লক্ষিপ্রসাদ গ্রামের এক কিলোমিটার অংশজুড়ে মাটির সাথে বড় বড় ঢাক ও বোল্ডার পাথর দিয়ে শক্ত ও মজবুদ ভাবে পুননির্মাণ করা হয়।
বেঁড়ীবাধের ঠিক বিপরীত দিকে বড়গাঙ এলাকায় খাস ভূমি হতে বালু উত্তোলন ও বিক্রি অনুমতি থাকলেও বাঁধের নিরাপত্তার স্বার্থে ১৮০ ফুট পর্যন্ত বালু উত্তোলনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তবে বিগত ৮/১০ বছর ধরে বড়গাঙ বালু ব্যবসায়ীদের একটি কুচক্রী মহল অতিরিক্ত মুনাফার লোভে পূর্ব লক্ষিপ্রশাদ এলাকায় বাঁধ সংলগ্ন স্হানে ১৮০ ফিটের ভিতর হতে বালু সংগ্রহ শুরু করে। যার ফলে নদীর নিচের অংশ হতে বালু কাটার ফলে বন্ডার পাথর গুলো ধসে পড়তে শুরু হয় এবং শ্রমিকেরা রাতের আধারে বাঁধের সেই পাথর গুলো গোপনে নৌকাযোগে চুরি করে নিয়ে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাসনাত বলেন, বড়গাঙ এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় বাঁধের ১৮০ ফুটের ভিতর থেকে বালু ও পাথর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে পূর্ব লক্ষিপ্রশাদ গ্রাম সংলগ্ন বাঁধের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার বড় অংশ ভেঙ্গে গেছে। প্রতি বছর সারী গোয়াইন নদীতে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের ফলে ভাঙনের পরিমান আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে চরম শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে বেঁড়ীবাধ এলাকার কয়েক হাজার পরিবার।
স্থানীয় অপর প্রবীন ব্যাক্তি আবদুল লতিব বলেন, ২০১৭/১৮ ‘র সময় বেঁড়ীবাধ রক্ষার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করে এলাকাবাসী। সে সময় জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌরিন করিম সরজমিনে বাঁধের দূরাবস্থা দেখে ১৮০ ফুট পর্যন্ত নদীর অংশে লাল নিশানা টাঙিয়ে দেন এবং নিশানার ভিতরের অংশ হয়ে সব ধরনের বালু উত্তোলন ও পাথর চুরির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু কয়েক মাস বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও পুনরায় রাতের আধারে সক্রিয় হয়ে উঠে চক্রটি।
এ বিষয় বড়গাঙ বালু মহালের ইজারাদার ইসমাইল মিয়া বলেন, বেঁড়ীবাধ সংলগ্ন এরিয়া হতে বালু উত্তোলনের কোন সম্পৃক্ততা বা নির্দেশনা ইজারাদার কর্তৃপক্ষের নেই। এতে কেউ জড়িত থাকলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন।
জৈন্তাপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী রিয়াজ পারভেজের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে জানান, তিনি ছুটিতে আছেন। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ তার কার্যালয়ে আসলে তিনি প্রয়োজন ব্যবস্হা গ্রহন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
এ দিকে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, পূর্ব লক্ষিপ্রাসাদ গ্রাম ও পাশ্ববর্তী এলাকার প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে তার দপ্তরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, উক্তো বিষয়ে উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রহন করা হবে।