নিজস্ব প্রতিবেদক :: দৈনিক নয়াদিগন্ত ও জালালাবাদের রিপোর্টার নিহত এ টি এম তুরাব হত্যা মামলার ৬ নং আসামি পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মঈন উদ্দিন সিপনকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ায় সিলেটের সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই হত্যা মামলার সব আসামিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ও পরিদর্শক মঈনকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার কার্যালয়ের সামনে দেড় ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিকরা।
সিলেট বিভাগীয় ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের ডাকে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব, সিলেট প্রেসক্লাব, ইমজা, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের নেতৃৃবৃন্দসহ সিলেটে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রিক ও নিবন্ধিত অনলাইনের সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।
অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে বক্তারা বলেন- বাংলাদেশের ইতিহাসে পুলিশের গুলিতে সিলেটে সাংবাদিক নিহতের ঘটনা এই প্রথম। এই ঘটনায় আমরা হতভম্ব, বিস্মিত ও গভীর শোকাহত এবং সেই সাথে ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় সাংবাদিক তুরাবের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৯ জুলাই আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি নেই। উপরন্তু এ মামলার ৬ নং আসামি, ঘটনার সময়ের সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মঈন উদ্দিন সিপনকে তার বাড়িতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগে রবিবার দিবাগত রাতে বিজিবি আটক করেছিলো। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে- একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও পরদিন দুপুরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এতে আমরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছি। পাশাপশি তুরাব হত্যাকাণ্ডে জড়িত এসএমপি'র সাবেক কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ ও গোলাম কাওসার দস্তগীরসহ সকল আসামিকে অবিলম্বে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করার জোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে সিলেটের সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিতে বাধ্য হবেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বক্তারা সাবেক স্বৈরাচার সরকারের করা 'ওয়ারেন্ট কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার লিখিত অনুমতি ছাড়া সরকারি অভিযুক্ত কর্মচারীকে গ্রেফতার করা যাবে না' এমন কালো আইন বাতিল করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তুরাব হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, স্বরাষ্ট্র ও উপদেষ্টা আইন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারে বিএনপির মিছিল চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। ঘটনার পর নিহতের ভাই কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ সেটি জিডি হিসেবে রেকর্ড করে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়- তারা নিজেই একটি মামলা দায়ের করেছে, তাই এটি জিডি হিসেবে রেকর্ড করেছে। তবে পরবর্তীতে দেখা যায়, পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় কোনো পুলিশকে অভিযুক্ত করা হয়নি। বরং আন্দোলনকারী বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্র-জনতাকে আসামি করা হয়েছে।
পরে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৯ আগস্ট তুরাবের বড় ভাই সিলেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ঘটনার সময়ের কোতোয়ালি থানার ওসি মঈনকে ৬ নং আসামি করা হয়। সেই মঈনকে রবিবার দিবাগত রাতে তার বাড়িতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগে রবিবার দিবাগত রাতে বিজিবি আটক করেছিলো। পরে তাকে মাধবপুর থানাপুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবি। কিন্তু সোমবার দুপুরে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়- বিজিবি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র পরিদর্শক মঈনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করতে পারেনি এবং কোনো অবৈধ অস্ত্রের সঙ্গে মঈনের সংশ্লিষ্টতাও নেই। ফলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com