টুডে সিলেট ডেস্ক :: ‘ডিসিকান্ডে’ আলোচিত যুগ্ম সচিব কে.এম. আলী আযমকে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। দেশের অর্ধ শতাধিক জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে যে বিতর্কের সূচনা হয়েছে, তা এখনো সুরাহা হয়নি। এই বিতর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব কে এম আলী আযমসহ আরেকজন। এরমাঝেই তাকে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সিলেটের রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে। তবে সিলেটে রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের কেউ কেউ মনে করেন, এ ঘটনার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাকে পদায়ন করা সমিচিন নয়।
দেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ডিসি পদে নিয়োগপ্রত্যাশী বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের অভিযোগ, অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের ডিসি বানানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর ডিসি নিয়োগের দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে এপিডি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব কে এম আলী আযমসহ অপর আরেক যুগ্ম সচিবকে কক্ষে অবরুদ্ধ করেছিলেন বঞ্চিত কর্মকর্তারা।
গত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দুই দিনে দুই দফায় মোট ৫৯ জন জেলাপ্রশাসক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই নিয়োগের পর পরই সবাই কাজে যোগ দিতে প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। তবে বিপত্তি বাধে যারা ডিসি পদায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের দাবি মুখে। তারা এই নিয়োগ বাতিলের দাবি তুলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হৈ চৈ শুরু করেন। উপ-সচিব পর্যায়ের ওই সকল কর্মকর্তা এক পর্যায়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ শাখার যুগ্ম সচিব কে এম আলী আযমের কক্ষে ঢুকে এসব করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নতুন নিয়োগ দেওয়া ৮ জেলার জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এ ছাড়া ৪ জেলার জেলা প্রশাসক পরিবর্তন করা হয়। বাকি নিয়োগ প্রাপ্তদের নিয়োগ যাচাই-বাছাই করতে গঠন করা হয় কমিটি। সেইসঙ্গে যুগ্ম সচিব কে এম আলী আযমকেও সরিয়ে নেওয়া হয়।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ শাখার যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদের রুম থেকে তিন কোটি টাকার একটি চেক উদ্ধার করা হয় বলে দেশের শীর্ষ এক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পর পরই শুরু হয় হৈ-চৈ। পদায়ন হওয়া এক জেলা প্রশাসকের পক্ষে ওই যুগ্মসচিবকে চেকটি দেন এক ব্যবসায়ী।
যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আরেকটি কাগজে ডিসি নিয়োগের ভাইভা দেওয়া প্রার্থীদের সংখ্যা ছিল। ওই কাগজের হাতের লেখা আলী আযমের। ডিসির ফিটলিস্ট তৈরি করতে মোট ৫৮২ প্রার্থীকে এসএসবির কাছে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। এর মধ্যে ৪৭০ জন কর্মকর্তা উপস্থিত হোন। বাকি ৫২ জন ভাইভা দিতে যাননি।
এ নিয়ে যমুনা টেলিভিশন কথা বলে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে আমি জানি না। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নজিরবিহীন ওই ঘটনার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন!’ শীর্ষক প্রতিবেদন বিষয়ে তদন্তের জন্য এক সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই কমিটি চেকের সত্যতা যাচাই করবে। মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বেরিয়ে আসবে প্রকৃত ঘটনা এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ডিসিকান্ডে নানাভাবে জড়িত একজনকে সিলেটে পদায়ন সিলেটবাসী মেনে নিবেনা। তিনি অবিলম্বে এই পদায়ন বাতিলের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর ফখরুল ইসলাম বলেন, ডিসি কেলেঙ্কারিতে বিতর্কিত ব্যক্তিকে পূণ্যভূমি সিলেটে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা উচিত হয়নি। এটি সিলেটবাসী মেনে নিবে না। তিনি অবিলম্বে তাকে প্রত্যাহারের আহবান জানান।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যদি নতুন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়ে প্রশ্ন উঠে থাকে তাহলে এই ঘটনার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাকে গুরুত্বপূর্ণ এমন পদে পদায়ন করা সমিচিন হয়নি। তদন্ত শেষে যদি তিনি অভিযুক্ত না হন তাহলে পদায়ন করা উচিত বলে আমি মনে করি। সূত্র: আজকের সিলেট
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com