নিজস্ব প্রতিবেদক :: গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই সিলেটে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন।
৫ আগস্টের পর পরই সিলেটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। কেউ কেউ ভারত হয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
ইতোমধ্যেই দেশে-বিদেশে অবস্থানরত এসব নেতাকে আসামি করে কয়েকশ মামলা করা হয়েছে। থানা ও আদালতে করা হচ্ছে একের পর এক মামলা। আসামি হচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপি-চেয়ারম্যান থেকে নিয়ে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আর এসব মামলায় সিলেট বিভাগে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের অন্তত ১১ জন বিভিন্ন সারির নেতা। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পর্যন্ত রয়েছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া এসব নেতাদের মধ্যে কেউ পালাতে গিয়ে বিমানবন্দর কেউ অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত দেড়টার দিকে নরসিংদীর রায়পুরা থানাধীন এলাকা থেকে র্যাব-৯ ও র্যাব-১১ যৌথ অভিযান চালিয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজিবুর নরসিংদীর রায়পুরা থানাধীন দুকুন্দিচর গ্রামের রবি উল্লাহ ছেলে।
তার বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় নাশকতা মামলা রয়েছে। এছাড়াও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শাবি শিক্ষার্থী রুদ্র সেন হত্যা মামলার আসামিও তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে হামলার ঘটনায় করা মামলার দুই নাম্বর আসামি। বর্তমানে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে রয়েছেন।
২৬ আগস্ট সন্ধ্যার পর সৌদি আরব পালাতে গিয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শামিম আহমদ ও প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান জামিল। আটকের সময় তারা হজের ইহরামের কাপড় পরা অবস্থায় ছিলেন।
৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জৈন্তাপুর বিওপির ১২৯২ পিলারের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা কালে বিজিবির হাতে গ্রেপ্তার হন জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান কামাল আহমদ।
২৯ আগস্ট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পালানোর সময় সাবেক বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের ভাগ্নে ও বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালেহ আহমদ জুয়েল ও বড়লেখা সদর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি জালাল উদ্দিনকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তারা সৌদি আরবে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এদিকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের একটি বাসা থেকে কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মাহবুবুর রহমান মান্নাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা রয়েছে।
২২ সেপ্টেম্বর সিলেট নগরী থেকে র্যাব-৯ এর হাতে গ্রেপ্তার হন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও কালারুকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অদুদ আলম। নাশকতা, সহিংসতা ও হত্যা চেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে কোতোয়ালী মডেল থানার কাছে হস্তান্তর করে র্যাব।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ৩টার দিকে সিলেট মহানগরের শেখঘাট এলাকা থেকে সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা মো. রেদওয়ান আহমদ বাপ্পিকে (৪০) গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯। বাপ্পি শেখঘাট এলাকার মৃত মো. শহিদ উল্লাহ’র ছেলে। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে ৫ সেপ্টেম্বর বিস্ফোরক আইনে আদালতে দায়েরকৃত মামলা রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে র্যাব-৯ শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্প ও র্যাব-২ এর অভিযানিক দল যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে সেলিমকে ধানমন্ডি থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জে রিপন শীল ও মোস্তাক আহমেদ হত্যা মামলা রয়েছে।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com