ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল ও রুই বিল হাওরের ছয়টি ফসল রক্ষা বাঁধের ১০টি স্থানের বেশ কিছু অংশ সপ্তাহখানেক আগে রাতের আঁধারে কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বাঁধগুলোর কাটা স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় নিষিদ্ধ ভিম জাল পেতে মাছ শিকার করা হচ্ছে।
এদিকে, বাঁধ কেটে মাছ শিকার করায় কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
ধর্মপাশা উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল, ধানকুনিয়া, জয়ধনা, সোনামড়ল, রুই বিল, গুরমা ও কাইলানী এই সাতটি হাওর সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন। হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি কমিটি (পিআইসি) গঠন করে বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও মেরামতকাজ চলে আসছে। রুই বিল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ৮৯, ৯০ ও ৯১ নম্বর প্রকল্পের পাঁচটি এবং চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ৭৫, ৭৬ ও ৭৭ নম্বরের প্রকল্পে পাঁচটি স্থানে মাছ শিকারের উদ্দেশে সপ্তাহখানেক আগে রাতের আঁধারে ১০ থেকে ১২ ফুট করে জায়গা কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বাঁধগুলোর কাটা স্থানে নিষিদ্ধ ভিম জাল পেতে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে বাঁধের কাটা স্থানগুলো দিন দিন বড় হচ্ছে।
সরেজমিনে দুটি হাওরের চারটি ফসল রক্ষা বাঁধ ঘুরে দেখা যায়, বাঁধের দুই পাশে বাঁশের খুঁটি পুঁতে কাটা অংশে ভিম জাল পেতে রাখা হয়েছে। তবে এ সময় কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঁধের কাটা জায়গায় সকালে জাল পেতে রাখা হয় এবং সন্ধ্যার দিকে মাছসহ তা তোলা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, মাছ শিকারের জন্য প্রতিবছরই বাঁধ কেটে দেওয়া হয়। এ কাজে আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই জড়িত ছিলেন। এবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ায় স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই কাজে জড়িয়ে পড়েন।
বাঁধ কাটায় বোরো মৌসুমে জমিতে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে জানান কৃষকেরা। এ বিষয়ে প্রশাসন কঠোর না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন অনেকে। রুই বিল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ৯০ নম্বর প্রকল্প কাজের সভাপতি নেকচান মিয়া বলেন, এই হাওরের ৮৯, ৯০ ও ৯১ এই তিনটি ফসল রক্ষা বাঁধের পাঁচটি জায়গায় ১০-১২ ফুট করে সপ্তাহখানেক আগে মাছ শিকারের জন্য রাতের আঁধারে কেটে দেওয়া হয়েছে। কাটা জায়গায় ভিম জাল পেতে মাছ ধরা হচ্ছে। যারা বাঁধ কাটার সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি চান নেকচান।
চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ৭৬ নম্বর পিআইসির সভাপতি মমিন মিয়া বলেন, বাধ কাটায় বোরো মৌসুমে জমিতে পানি সেচ দেওয়ায় সমস্যা হবে। এ কাজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম রহমত বলেন, বাঁধ কাটার সঙ্গে তাদের দলের বা সহযোগী সংগঠনের কেউ জড়িত আছে কি না, তা জানেন না। তবে এ কাজে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে মাছ শিকার করায় কৃষকদের চরম সর্বনাশ করা হচ্ছে বলে জানান সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন। তিনি বলেন, প্রশাসন কঠোর না হলে এই বাঁধ কাটা কখনো বন্ধ হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে মাছ শিকার করার কাজে নিয়োজিতরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com