ধর্মপাশা প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে আগুন লেগে একই পরিবারের ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। মধ্যরাতে ঘরটিতে কিভাবে আগুন লাগলো সে প্রশ্ন এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে। এটি কি নিছক দুর্ঘটনা না এর পেছনে অন্য কিছু আছে সে প্রশ্নও উঠছে। পুলিশ সুপার বলছেন, তদন্তের জন্য সিআইডি ও পিবিআই-এর একটি দল পুলিশকে সহযোগিতা করছে।
ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের সোনামড়ল হাওরের পশ্চিম পাড়ের শীমের খাল গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরটিতে তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকতেন ইঞ্জিনচালিত নৌকাচালক এমারুল মিয়া দম্পতি। মধ্যরাতে তাদের ঘরে আগুন লেগে এমারুল মিয়া, তার স্ত্রী ও চার ছেলে-মেয়েরেই মৃত্যু হয়।
শীমের খাল ও আশপাশের গ্রামের অনেকেই জানান, সোমবার এমারুল জয়শ্রী বাজার থেকে আপেল, আঙুরসহ বিভিন্ন ফল ও মোরগের মাংস কিনে নিয়ে আসেন। যেদিন ঘরে আগুল লাগে সেদিন তিনি আত্মীয়সহ কাছের মানুষদের নিয়ে খাবার খাওয়া, এর আগের দিন ১০ লিটার ডিজেল কেনা,মাংস ফলমূল কেনাসহ নানান বিষয়েই আলাপ হচ্ছে গ্রামে। সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন এমারুল মিয়ার শ্বশুর চেরাগ আলী জানান, সোমবার বিকেলে এমারুল তার ঘরে গিয়ে রাতে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়ে আসেন। সেই রাতে পরিবার পরিজন নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন এমারুল। তবে চেরাগ আলী সেখানে যেতে পারেননি। তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম সেখানে খেতে গিয়েছিলেন।
চেরাগ আলী বলেন, রাত ১২টার দিকে কামালের চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি, এমারুলের ঘরের ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ভেতর থেকে ঘরের দরজা বন্ধ থাকার কারণে দরজা খুলে ভেতরে যাওয়া যাচ্ছিল না। আগুনের তাপের কারণে স্টিলের দরজা ভাঙতেও পারছিলেন না ঘটনাস্থলে উপস্থিতরা । এর পর এক ঘণ্টার চেষ্টায় গ্রামের সবাই মিলে নেভানো হয় আগুন। পরে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন, সব ছাই হয়ে গেছে। একটি কক্ষে পাঁচজন এবং পাশের কক্ষে একজনের লাশ ছিল। পাশের কক্ষের লাশটা তার ছোট নাতিন ফাতিমার ছিল।
প্রতিবেশীরা জানান, এমারুল ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে হাওরে মাছ ধরতেন। ঘটনার আগের দিন ১০ লিটার ডিজেল কিনে এনে ঘরে রেখেছিলেন। তিনি কিছুটা রাগী স্বভাবের ছিলেন। বছর কয়েক আগে তার চলাফেরাও নাকি কিছুটা এলোমেলো ছিল। তবে বেশ কিছু দিন যাবত অনেকটাই শান্ত ছিলেন এমারুল।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনা কীভাবে ঘটলো তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনই আমরা মন্তব্য করছি না যে তাদের কেউ হত্যা করেছে, কিংবা আত্মহত্যা করেছে এরা বা দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এবং পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটা ধারণা পেয়েছে যে, বৈদ্যুতিক কোনো শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনা তদন্তের জন্য সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ও পিবিআইকে সহযোগিতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে। তদন্তের আগে এর বেশি বলা যাচ্ছে না।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহতদের স্বজন এবং গ্রামবাসীদের সাথে কথাও বলেন তিনি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com