সুব্রত দাশ, অতিথি প্রতিবেদক :: ঢাকের তালে, শিউলির মিষ্টি সুবাসে ভরা দুর্গাপুজার আনন্দ। কাজে, ব্যস্ততায় কাটে গোটা বছর। তার মাঝে এই দুর্গাপুজা-টুকুই যেন চুটিয়ে আনন্দ করা সুযোগ পান কাজে বিমূঢ় বাঙালি। নতুন জামা-কাপড়ে সেজে ওঠে পুজার প্যান্ডেল। এ গলি ও গলি পেরিয়ে চলে নতুন থিমের সন্ধান। আর মাত্র দুই দিন পরে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
পূজা শুরু হবে আগামী বুধবার (৯ অক্টোবর)। এরই মধ্যে সিলেটের মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে পূজার কেনাকাটার ধম। প্রতিবছরই দুর্গাপূজা ঘিরে শপিং মলগুলোতে থাকে বাড়তি চাপ। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ড আবহাওয়া বিবেচনায় নিয়ে এসেছে নিত্য-নতুন সব পোশাক।
বিভিন্ন শপিং মলে শেষ সময়ে ক্রেতাদের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সেই সাথে নিত্য নতুন কালেকশনের পাশাপাশি ক্রেতাদের মনোযোগ টানাতে তোলা হয়েছে বিভিন্ন নামের পোশাক। তবে এবার দেশীয় পোশাকে ঝুঁকেছেন সিলেটের ক্রেতারা।
অনেকে এরই মধ্যে কেনাকাটা সেরেছেন। অনেকে আসছেন নতুন করে কিনতে। কেউবা আসছেন টুকিটাকি কেনাকাটার জন্য। তবে শেষ সময়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে জুয়েলারি আইটেম, কসমেটিকস, জুতো ও সেন্ডেল। পোশাক কেনাকাটাও চোখে পড়ার মতো।
ব্যবসায়ীরা জানান, দুর্গাপূজায় সাধারণত ছিমছাম পোশাকের কদর বেশি থাকে। শরতের মোহনীয় রূপের সঙ্গে মানানসই ধর্মীয় এবং ট্রেন্ডি পোশাক এখন হালফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে। ধুতি, পায়জামা, পাঞ্জাবি, প্যান্ট, টি-শার্ট, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, থ্রিপিস, কুর্তি, জুয়েলারি ও শাখা রয়েছে কেনাকাটার পছন্দের তালিকায়। একইসঙ্গে ওয়েস্টার্ন পোশাকও বিক্রি হয়ে থাকে পূজাকে ঘিরে। দুর্গাপূজায় শাড়ির কদরও বেশি। সেজন্য দোকানিরা জামদানি, বেনারসি, রেশমি শাড়ি, তাঁতের শাড়ি, কাতান শাড়ি, সুতি শাড়ি, মণিপুরী শাড়ি এবং ঢাকাই জামদানির পর্যাপ্ত কালেকশনের পাশাপাশি বয়ন, নকশা ও আভিজাত্যের জন্য কলকাতা ও রাজস্থানি শাড়িও সংগ্রহ করেছেন।
নগরীর জিন্দাবাজার, নয়া সড়ক, বন্দর বাজার, আম্বরখানা, রিকাবীবাজার, চৌহাট্টাসহ এলাকার বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। সব এলাকায় মার্কেটগুলোকে সাজানো হয়েছে রকমারি সাজে। সেই সাথে নিত্য নতুন কালেকশনের পাশাপাশি ক্রেতাদের মনোযোগ টানার চেষ্টায় কোন ত্রুটি নেই বিক্রেতাদের।
সকাল থেকেই নারী-পুরুষরা ভিড় করছেন সিলেটের বিভিন্ন শপিং মলগুলোতে। দরদামে ব্যস্ত সময় পার করেছেন দোকানের কর্মচারীরাও। চারদিকে যেন উৎসবের আমেজ। নিজের পছন্দের পোশাক কিনার সাথে সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পোশাকটাও কিনে নিচ্ছেন অনেকে।
প্রিয়া দাস নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘এদিকে শপিং করতে আসি কিছুটা কম দামে জিনিস পাওয়ার জন্য। কিন্তু এখানকার ব্যবসায়ীরা যে কোনো জিনিসের অতিরিক্ত দাম হাঁকছেন। পূজার আগে যেসব শাড়ি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হতো, সেগুলোর এখন দাম চাইছে ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা। পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করাটা এক প্রকার দুরূহ ব্যাপার হয়ে গেছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, ‘সব ধরনের ক্রেতারা আসেন বিধায় অধিকাংশ দোকানেই ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০-১৫ হাজার টাকা দামের শাড়িও রয়েছে। অধিকাংশ ক্রেতাই কিছুটা কম দামের শাড়ি নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দোকানে খোঁজ করছেন। তারাও ক্রেতাদের চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী শাড়ি দেখাচ্ছেন। এ বছরও বেচাকেনা বেশ ভালো।’
এদিকে, দুর্গাপূজায় সিলেটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে প্রশাসন। নিয়মিত পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব, আনসার-ভিডিপি ও পুলিশ প্রশাসন।এছাড়া পূজাকালীন নিরাপত্তা ও বিভিন্ন বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।
পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব, আনসার-ভিডিপি ও পুলিশ প্রশাসন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ বাহিনীর সদস্য, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, র্যাব এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া কোনো গুজবে কান না দিয়ে যে কোনো প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পূজা মণ্ডপ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী- এ বছর সিলেটে জেলায় ৪৪১টি এবং মহানগরে ১৫৪টি মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com