আহমাদ হোসাইন আইমান, জকিগঞ্জ :: জকিগঞ্জে ৮২টি পূজামণ্ডপে পালিত হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব, ৯ অক্টোবর থেকে মহাষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শুরু হয়ে টানা ৫ দিনব্যাপী চলবে এ উৎসব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পালনে সর্বত্র চলছে সাজ-সাজ রব। পাড়ায়-পাড়ায় চলছে আকর্ষণীয় পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ। বরাবরের মতো এ বছরও পূজামণ্ডপ তৈরিতে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করছেন স্ব-স্ব পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
পূজার সময় ঘনিয়ে আশার সাথে-সাথে প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততাও বাড়ছে লক্ষনীয়ভাবে। বাঁশ, খড় ও মাটির কাজ শেষ করে চলছে প্রতিমা রঙের কাজ। প্রতিমা শিল্পীর শেষ আঁচড় পড়ার সাথে-সাথেই শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে প্রতিটি পূজামণ্ডপ। এ লক্ষ্যেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিটি মণ্ডপে চলছে সাজ-সজ্জা ও প্রতিমা তৈরির কাজ। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
উপজেলার ৮২টি পূজা মণ্ডপের মধ্যে ১টি পূজামণ্ডপ পৌরসভার অভ্যন্তরে। এছাড়া বারহাল ইউনিয়নে ৯টি, বিরশ্রী ইউনিয়নে ১৫টি, কাজলসার ইউনিয়নে ৭টি, খলাছড়া ইউনিয়নে ১০টি, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৩টি, সুলতানপুর ইউনিয়নে ১০টি, বারঠাকুরী ইউনিয়নে ৭টি, কসকনকপুর ইউনিয়নে ৩টি মানিকপুর ইউনিয়নে ১১টি সার্বজনীন ও ব্যাক্তিগত ৬টি পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় উৎসব পালনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও থানাপুলিশের উদ্যোগে ইতিমধ্যে পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসব বৈঠকে ৮২টি পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ইমাম, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উৎসব চলাকালে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে কোনো ব্যাঘাত ঘটে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।
এছাড়া আযান-নামাজের নির্ধারিত সময়ে গান-বাজনা, উচ্চ শব্দ বিশিষ্ট বাদ্যযন্ত্র বাজানো এবং আতশবাজী বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রতি পূজামণ্ডপে নারী-পুরুষদের জন্য পৃথক রাস্তা, সিসি টিভি, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়।
পৌর পূজা উদযাপন পরিষদে সভাপতি বাবু সঞ্জয় চন্দ্র নাথ এবং সাধারন সম্পাদক রাজস বিশ্বাস জানান, প্রশাসনের বৈঠকে যে সকল বিষয়ে আলোচনা বা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকেও প্রায় এমনই নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা সকল পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দকে মেনে চলার জন্য আলোচনার বৈঠকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বরাবরের মতো এ বছরও ধর্ম-বর্ণ সকলের সার্বিক ও আন্তরিক সহযোগিতায় শান্তপূর্ণভাবে শারদীয় উৎসব পালিত হবে বলে তারা আশাবাদী।
জকিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এস.এম. মাহমুদ হাসান রিপন জানান, পূজায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ইতোমধ্যে সকল পূজা কমিটি নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি মন্দিরে থানাপুলিশের পাশাপাশি আনসার, গ্রামপুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক টিম ও মোবাইল টিম কাজ করবে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবক টিম সড়কে ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিম সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, উৎসব চলাকালীন সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময়ই নজরদারী থাকবে।
তিনি আরও বলেন, জকিগঞ্জ হচ্ছে সম্প্রীতির শহর। গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা পরামর্শ দেন তিনি। শান্তি বিনষ্টকারী এবং গুজব ছড়ানোকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। শারদীয় উৎসব উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী নিয়মিত মোবিং করবে। দুর্গোৎসব পালনে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি।