চোখের জলে সিলেটে প্রতিমা বিসর্জন: মন্দিরে মন্দিরে শান্তির প্রার্থনা
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ত্রিনয়না দেবীর প্রতিমা বিসর্জনে সিলেটে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। রোববার (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরেছেন দেবী দুর্গা। দেবীর বিদায়ের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসব সমাপ্ত হলো।
এদিন বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সিলেট নগরের চাদনীঘাটের সিঁড়ি দিয়ে সুরমা নদীতে বিসর্জন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বিসর্জন অনুষ্ঠানের আগে পাশ্ববর্তী আলী আমজদের ঘড়িঘর সংলগ্ন স্থানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিলেটের বিশিষ্টজনেরা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এরআগে বেলা ২টা থেকে নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাক যোগে প্রতিমা বিসর্জন দিতে রওয়ানা হন পূজারিরা। তারা ঢাকঢোল পিটিয়ে, বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে দেবী দূর্গার প্রতিমা বিসর্জন দিতে যান। বিসর্জন অনুষ্ঠান ঘিরে নগরময় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বলে জানিয়েছে এসএমপি পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
এবছর সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় ৫৯৩টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট মহানগরের সাধারণ সম্পাদক চন্দন দেব এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সিলেট জেলায় মোট ৪৪০টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে সার্বজনীন ৪০৮টি ও পারিবারিক ৩২টি। এছাড়া মহানগর এলাকায় ১৫৩টি মণ্ডপের ১৩৬টিতে সার্বজনীন এবং ১৭টিতে পারিবারিকভাবে পূজা উদযাপন করা হয়।
তিনি বলেন, মহানগর এলাকার ১২৩ টি মন্ডপের প্রতিমা নগরের ক্বীন ব্রিজ সংলগ্ন চাঁদনীঘাটের সিঁড়ি দিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। অন্য প্রতিমাগুলো যার যার সুবিধামতো স্থান দিয়ে বিসর্জন দেওয়ার কথা রয়েছে।
সিলেটের গোপালটিলা মন্দিরের কাব্য তীর্থ রজত কান্তি চক্রবর্তী বলেন, এবার দেবী মর্ত্যলোক থেকে কৈলাশে ফিরেছেন ঘোটকে। আর মর্ত্যলোকে আগমন ঘটেছিল দোলায় চড়ে। দেবীর ঘোটকে (ঘোড়া) গমমের ফল: ছত্রভঙ্গতরঙ্গমে, অর্থাৎ- দেবীর আগমন বা গমন ঘোড়ায় হলে ছত্রভঙ্গ মানে রাজাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। দোলায় (পালকি) হলে- দেবীর দোলায় (পালকি) চড়ে আসার ফল মড়কং ভবেৎ মড়ক হয়। মানে মহামারির কারনে তথা নানান কারনে মানুষের মৃত্যু। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের উত্থান পতনে হানাহানি লক্ষ্য করা গেছে।
তিনি বলেন, পঞ্জিকা মতে, মূলত রাজায় রাজায় যুদ্ধ হবে, প্রাণহানি হবে, যেটি চলমান থাকবে। যে কারণে নেতিবাচক যাতে ঘটনা না ঘটে এবং শান্তির জন্য মন্দিরে মন্দিরে প্রার্থনা করবো।
এর আগে সিলেট নগরের মন্দিরে মন্দিরে চলে নারীদের সিঁদুর খেলা। এদিন সকাল ১০টায় ঘট বিসর্জনের পর দেবীর চরণে সিঁদুর ছোঁয়ান সনাতন ধর্মাবলম্বী এয়োস্ত্রীরা (সধবা নারী)। এরপর সমবয়সি নারীরা মাতেন সিঁদুর খেলায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দুপুরের পর থেকে শুরু হয় বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা। দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক গণেশকে দেয়া হয় বিসর্জন। দুর্গার বিদায়ে বিষাদের মাঝে আনন্দ কেবল সিঁদুর খেলায়। এরপর বিকেলে চোখের জলে ত্রিনয়নীকে বিদায় দেন ভক্তরা।