তাহিরপুর প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাহিরপুর-বাদাঘাট ৮ কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কে মেরামতের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তিন যুগে কোনো সুফল পায়নি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের সাড়ে তিন লাখ মানুষ। এছাড়া এই সড়কে টেন্ডার হলেও কাজ শুরু করছে না কন্টাক্টর।
বর্তমানে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন ও গর্তের কারণে সেটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন নিয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করছে। পড়ছে দুর্ঘটনার মুখে। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে ও জনদুর্ভোগ লাঘবে সড়কটি দ্রুত চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছে উপজেলাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটি ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর তারিখে দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। নির্মাণ কাজটির দুটি প্যাকেজের একটি তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে হুছনাঘাট পর্যন্ত, অন্যটি হুছনারঘাট থেকে সুন্দরপাহাড়ি গ্রাম পর্যন্ত। প্রথম প্যাকেজের তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে হুছনারঘাট পর্যন্ত অনুমোদিত কাজ সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহ্বানের অনুমোদন হয়েছে। দ্বিতীয় প্যাকেজের হুছনারঘাট থেকে সুন্দরপাহাড়ি পর্যন্ত ৯৩ কোটি টাকায় কার্যাদেশ পায় ঢাকাস্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নবারুন কনস্ট্রাকশন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে বাদাঘাট ইউনিয়নের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। অর্থনৈতিক ও পর্যটন সমৃদ্ধ হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক উপজেলা সদরের সঙ্গে সাতটি ইউনিয়নের। এ উপজেলার ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজার। এছাড়া চারটি ইউনিয়নের লোকজন, উপজেলা সদর হাসপাতাল, বাদাঘাট সরকারি কলেজ, জয়নাল আবেদিন ডিগ্রি কলেজ, তিনটি শুল্ক স্টেশনের ব্যবসায়ী, পর্যটন স্পট শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী, বারেকটিলা, শহীদ সিরাজ লেক যেতে হলে ভাঙচুরা এই সড়ক দিয়ে বর্ষায় হুসনারঘাট থেকে পাতারগাঁও নৌকায় পারাপার হতে হয়।
শুষ্ক মৌসুমে হুসনারঘাট থেকে পাতারগাও থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত মাটির সড়কটি গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। হুসনারঘাটের ছোট সেতুটি হেলে গেছে, যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে আর মাটির সড়কটি জায়গায় জায়গায় ভাঙা। আর টাকাটুকিয়া সেতু সংযোগ অংশ মাটি সরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। অন্যদিকে হাসপাতালে সড়ক থেকে টাকাটুকিয়া সেতু পর্যন্ত সড়ক যেভাবে ভেঙেছে, পায়ে হেঁটেও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এই সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রী পরিবহন করেন নানু মিয়াসহ অনেকেই। তারা বলেন, ‘উন্নয়ন করল কিন্তু গত তিন যুগ ধরে তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। অথচ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব নেওয়ার সময় জেলার মধ্যে এক নাম্বারে তাহিরপুর উপজেলা।
বাদারঘাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আলী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়তে ও চলাচলের বিকল্প সড়ক না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে উপজেলায় যেতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষজন। দ্রুত কাজ শুরু করার দাবি জানাই।
উপজেলা প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, ‘জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে। এটি উড়াল সড়কের আওতায় এসেছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য ভাঙা অংশ মেরামত করা হচ্ছে।