২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

add

ভারতীয় চোরাই চিনি ছিনতাইকালে বিএনপির দুই নেতাসহ আটক ৬

todaysylhet.com
প্রকাশিত ১৪ অক্টোবর, সোমবার, ২০২৪ ১৫:০৮:৫৮
ভারতীয় চোরাই চিনি ছিনতাইকালে বিএনপির দুই নেতাসহ আটক ৬

দল থেকে বহিষ্কার

টুডে সিলেট ডেস্ক :: ফের ট্রাকভর্তি চোরাই চিনি ছিনতাইকালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির দুই নেতা। একইসঙ্গে চিনি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত আরও চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

 

রবিবার মধ্যরাতে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সাদিপুর সেতু এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা তাদেরকে আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ভারতীয় চিনি ভর্তি ২৫০ বস্তার একটি ট্রাক, দু’টি মাইক্রোবাস ও দু’টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

 

চিনি ছিনতাইয়ে জড়িত ২ বিএনপি নেতা হলেন- মহানগর বিএনপির ২৫নং ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ সুরমার বারখোলার ৪৫ রূপালি আবাসিক এলাকার মৃত ছানা মিয়ার ছেলে মো. সোলেমান হোসেন সুমন (৪২) এবং ২৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভার্থখলার সোনালী-২২ আবাসিক এলাকার মৃত দিলু মিয়ার ছেলে মো. আবদুল মান্নান (৪৩)। এছাড়া চোরাচালানে জড়িত বাকীরা হলেন- সিলেট সদর উপজেলার বটেশ্বরের মলাইটিলার মৃত করম আলীর ছেলে মনির আহমদ (৩২), জৈন্তাপুরের বাঘেরখাল গ্রামের মমতাজ আলীর ছেলে তোফায়েল আহমদ (২৬), একই এলাকার জালাল উদ্দিনের ছেলে মো. শাহীন আহমদ (২৫) ও গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর তৃতীয়খণ্ড গ্রামের মঈন উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪২)।

 

এদিকে চোরাই চিনি ছিনতাইয়ে জড়িত ২ বিএনপি নেতাকে দুপুরে বহিস্কার করে সিলেট মহানগর বিএনপি। একই সাথে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব থেকেও তাদের বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া সোমবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ঐ ২ নেতাকে বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, জৈন্তাপুর থেকে জব্দ হওয়া ট্রাকে করে ২৫০ বস্তা বুঙ্গার চিনি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তাদের পেছনে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে (বক্সি) করে ট্রাকটি অনুসরণ করছিলেন ৪ জন চোরাকারবারি। এসময় চিনির চালান লুটের চেষ্টা চালান একদল ছিনতাইকারী। তারা একটি মাইক্রোবাস (নোহা) ও দুইটি মোটরসাইকেল নিয়ে চিনিভর্তি ট্রাকটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাদিপুর সেতুর সামনে থেকে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় পুলিশ চিনিভর্তি ট্রাক, দুইটি মাইক্রোবাস ও দুইটি মোটরসাইকেল আটক করে। এসময় ৬ জনকে পুলিশ আটক করতে সক্ষম হলেও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজন পালিয়ে যায়।

 

ওসি জানান, আটক হওয়া ৬ জনের মধ্যে বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং অপর ৪ জনের বিরুদ্ধে চোরাচালান দমন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, সিলেট সীমান্ত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ভারতীয় চোরাই চিনির ট্রাকটি সিলেট থেকে পিছু ধাওয়া করেন আটক বিএনপির দুই নেতাসহ অজ্ঞাত কয়েকজন। তারা শেরপুর এলাকায় পৌছার পর ট্রাকটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। জনতা বুঝতে পেরে তাদের আটক করে পুলিশকে খবর দেন। তখন আটক দু’জন নিজেদের বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। এমনকি আটক ২ বিএনপি নেতা সদ্য গঠিত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য বলে জানা গেছে। যে কমিটির সভাপতি হলেন রাগিব আলী এবং সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা মিফতাহ সিদ্দিকী।

 

স্থানীয়রা আরও জানান, ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা চিনির ট্রাকটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে সিলেট থেকে ধাওয়া করেন। পথিমধ্যে শেরপুর সেতু সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে ট্রাকটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে শুরু হয় হট্টগোল। এমন সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে দুই বিএনপি নেতাকে আটক করতে সক্ষম হলেও অন্যরা গাড়ি রেখে পালিয়ে যান। তখন জনতা পুলিশকে খবর দিলে তাদের আটক করে জব্দকৃত গাড়িসহ থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।

 

নাম প্রকাশে স্থানীয় সাদীপুর এলাকার এক যুবক বলেন, সিলেট ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারতীয় চোরাই চিনি ও গরু পাচার হয়। আমাদের এলাকা থেকে এ পর্যন্ত কয়েকটি চিনির গাড়ি ও একটি গরুর গাড়ি ছিনতাই হয়েছে। প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি করে তাদেরকে গ্রেফতারের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনার দাবী করছি।

 

সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, রাতে ওসমানীনগরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপি থেকে মো. সোলেমান হোসেন সুমন ও মো. আবদুল মান্নানকে বহিস্কার করা হয়েছে। এরকম ঘটনার সাথে যেই জড়িত থাকবে বিএনপি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

 

ওসমানীনগর সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান বলেন, রাতে চোরাই চিনিসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতীয় চোরাই চিনি পাচার ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা নেয়া হয়েছে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে চোরাচালান বন্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।