টুডে সিলেট ডেস্ক :: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এমন অনেকেই শহীদ হয়েছেন যারা আজ প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু আনন্দের এসব খবরে উচ্ছ্বাসের বদলে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে শহীদরের পরিবার, সহপাঠী ও স্বজনদের মধ্যে। যাদেরকে নিয়ে আনন্দ উদযাপন করার কথা ছিল তারা আজ নেই, ঘুমিয়ে আছেন কবরে। কিন্তু পৃথিবীতে রেখে গেছেন তাদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর।
শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন জিপিএ-৪.৮৩ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু আনন্দের এই খবরের উচ্ছ্বাসের বদলে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে শাহরিয়ারের পরিবার, সহপাঠী ও স্বজনদের মধ্যে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন শহীদ শাহরিয়ারের চাচা আব্দুল মোতালেব।
শাহরিয়ারের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কুমড়াশাসন উত্তরপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল মতিন। পরিবারের দুই সন্তানের মধ্যে শাহরিয়ার ছিল বড়। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
শহীদ ভাতিজার ফলাফলের খবর নিশ্চিত করে চাচা আব্দুল মোতালেব বলেন, পরীক্ষায় পাসের খবরে কলিজা ফেটে যাচ্ছে। আমার ভাতিজা আন্দোলনে শহীদ হয়েছে প্রায় তিন মাস আগে। এখন তার পরীক্ষার ফলাফল হয়েছে, সে পাস করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে একটি মাত্র ছেলে সন্তান ছিল শাহরিয়ার। এখন আমাদের দুই ভাইয়ের বংশে আর কোনো প্রদীপ নেই।
জানা যায়, শহীদ শাহরিয়ারের বাবা আব্দুল মতিন স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বতর্মানে ওমরা হজ করতে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তিনি ছেলের ফলাফলের খবর পেয়েছেন।
গত ১৮ জুলাই ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরের গোলচত্বরের কাছে গুলিবিদ্ধ হন শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন। তার ডান চোখের পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে মস্তিষ্ক ছেদ করে বেরিয়ে যায়।
শাহরিয়ারের পরিবার সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষার মধ্যে বন্ধ পেয়ে ঢাকায় মায়ের কাছে যান শাহরিয়ার। পরে মিরপুর ২ নম্বরে খালার বাসায় বেড়াতে যান। সেখানে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন। পরে মিরপুর ১০ নম্বরের গোলচত্বরের কাছে গুলিবিদ্ধ হন শাহরিয়ার। সেখানে তার খালাতো ভাইও গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। সেদিন একপাশে আন্দোলনকারী অন্য পাশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ ছিল।
সাদ আল আফনান পাটওয়ারী
লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাদ আল আফনান পাটওয়ারী এইচএসসিতে জিপিএ-৪.১৭ পেয়ে পাস করেছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আফনানের মা নাছিমা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আফনানের পাসের খবর আমার জন্য খুশির। কিন্তু খুশি উদযাপন যার সঙ্গে করব, সে তো আমার কাছে নেই। গুলি করে আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমার কোল শূন্য করে দিয়েছে।
আফনান লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাঞ্চানগর গ্রামের বাস টার্মিনাল এলাকার মৃত সালেহ আহমেদের ছেলে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরের সমন্বয়ক এনামুল হক বলেন, আফনান লক্ষ্মীপুরের প্রথম শহীদ। তিনি এইচএসসিসহ দুনিয়ার সকল পরীক্ষায় সফলতার সহিত কৃতকার্য হয়েছেন। আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেন দুনিয়ার মতো পরকালেও তাকে সফলতা লাভের তৌফিক দান করেন। একইসঙ্গে মহান আল্লাহ যেন তাকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরের আরেক সমন্বয়ক আরমান হোসেন বলেন, কোটা বৈষম্য দূর করতে যারা আন্দোলন করেছেন তারা সবাই মেধাবী ছিলেন। মেধার স্বীকৃতি দেওয়া ও নেওয়ার জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। তাদের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। শহীদ আফনান জিপিএ-৪.১৭ পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। এটাই প্রমাণিত হয়েছে, প্রকৃত মেধাবীরাই এ আন্দোলন করেছে।
লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরি কলেজের অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ বলেন, আফনান ভালো ফলাফল করেছে। এটা আনন্দের। কিন্তু সে তো আমাদের মাঝে নেই। তার ফলাফল শুনে আনন্দিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি, আমাদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
সবুজ মিয়া
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সবুজ মিয়া এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মঙ্গলবার এইচএসসির প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় শ্রীবরদী সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে সবুজ জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
শহীদ সবুজের এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্যের খবরে পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীদের মাঝে আনন্দের পরিবর্তে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শহীদ সবুজ মিয়া শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের রুপারপাড়া গ্রামের আজহার আলীর ছেলে।
গত ৪ আগস্ট শেরপুর জেলা শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে শহীদ হন সবুজ মিয়া।
সবুজের মা শমেজা খাতুন বলেন, আমার ছেলে আজ বেঁচে থাকলে রেজাল্টটা নিয়ে আমার কাছে আসতো সবার আগে। সবাইকে খুশিতে মিষ্টি খাওয়াতো। আজ আমার ছেলে না থাকায় সবকিছু অন্ধকার। ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ঘুম নেই। সারাক্ষণ টেনশনে মাথা ব্যথা করে। সবুজ আমাদের গোবরে পদ্ম ফুল ছিল, এলাকার সবার সঙ্গে ও খুব ভালো ব্যবহার করতো। প্রতিদিন কবিতা লিখে ও আমাকে শোনাতো। এখন আর কেও আমাকে কবিতা শুনায় না। আমার ছেলে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল, ওর কবি হওয়ার ইচ্ছা ছিল। আমার ছেলেকে যারা গুলি করে মারছে আমি তাদের বিচার চাই।
সবুজের মা রেজাল্টের কার্ড নিয়ে ঘুরছেন। এ দিকে সবুজের অসুস্থ বাবা সবুজের অপেক্ষায় বাড়ির সামনে পথ চেয়ে বসে আছেন।
সবুজের সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা একসঙ্গে আন্দোলনে যাই আমাদের গ্রাম থেকে। সবুজ দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে মারা যায়। আজ ওর রেজাল্ট হয়েছে কিন্তু সবুজ বেঁচে নেই—এটা আমার জন্য খুবই কষ্টের। আজ সবুজ বেঁচে থাকলে সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতো। আমার আমাদের গ্রামের একজন মেধাবী ভাই হারিয়েছি। খুব খারাপ লাগছে, এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে সবুজ মারা গেছে। আমরা সবুজের হত্যাকারীদের বিচার চাই, খুব দ্রুত যাতে সবুজ হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শ্রীবরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম আলিফ উল্লাহ আহসান বলেন, সবুজ অনেক ভালো ছেলে ছিল, আমাদের সঙ্গে সবসময় ওর যোগাযোগ ছিল। খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা অসুস্থ, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল সবুজ। এলাকার একটি ফার্মেসিতে ছোট থেকেই কাজ করে পরিবার চালাত। ছাত্র আন্দোলনে সবুজ মারা যাওয়াতে পরিবারে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা আমাদের কলেজের পক্ষ থেকে সবুজের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। সবুজ আমাদের গর্ব। অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে, কিন্তু সবুজ বেঁচে নেই। সবুজের এই মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আজ সবুজ বেঁচে থাকলে রেজাল্ট দেখে তার পরিবার অনেক খুশি হতো।
শহীদ মো. রায়হান
শহীদ মো. রায়হানের মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে গেছে। গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রায়হান। তিনি আজ জিপিএ-২.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
রায়হান নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের আমজাদ হাজী বাড়ির মো. মোজাম্মেল হোসেন ও আমেনা দম্পতির একমাত্র ছেলে। তিনি রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় ফলাফল জানতে পারে তার পরিবার। ফল পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বাড্ডায় বিজয় মিছিলে যোগদান করলে গুলিবিদ্ধ হন রায়হান। এরপর ৬ আগস্ট দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন বাড্ডায় একটি বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করতেন। রায়হান পাশেই একটি মেসে থাকতেন।
রায়হানের একমাত্র বোন উর্মি আক্তার বলেন, আমার ভাই অনেক ভালো ছাত্র ছিল। তার আচরণ কখনো খারাপ ছিল না। তার জন্য বাবা-মা সব সময় কান্না করেন। ফলাফল দেওয়ার খবর শুনে বাবা-মা কান্না করছেন। আমার ভাই বেঁচে থাকলে সবাই খুশি হত।
রায়হানের মা আমেনা খাতুন বলেন, আমার ছেলে বেঁচে নেই, তার এই ফল দিয়ে কী হবে? সে পাস করসে তা দিয়ে এখন কী করব। তার আরও ভালো রেজাল্ট করার কথা। সে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা এখনো কান্না করছেন। নিজেরা না খেয়ে সন্তানকে খাইয়েছি। তাকে ঢাকায় পড়ালেখা করাইসি। তার অনেক স্বপ্ন ছিল। সব স্বপ্ন বুলেটে শেষ হয়ে গেছে।
তার সহপাঠী মুশফিকুর রহমান সিফাত বলেন, রায়হান মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তার তো এ প্লাস পাওয়ার কথা। তার রেজাল্ট দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি।
গুলশান কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এম এ কালাম বলেন, আমাদের কলেজ থেকে এ বছর রায়হানসহ ৩৯৪ জন বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে ৩৮১ জন পাস করেছে। রায়হান জিপিএ-২.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার ফলাফল আরও ভালো হওয়ার কথা। কীভাবে এত খারাপ হলো তা আমাদের জানা নেই। তবে তার মৃত্যু আমাদের এখনো কাঁদায়। সরকার যেন তার পরিবারের সঙ্গে থাকে সে আশা করছি।
আবু রায়হান
স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হবেন একমাত্র ছেলে সন্তান আবু রায়হান। ছোটবেলা থেকে সেভাবেই তাকে গড়ে তুলেছে তার পরিবার। প্রাথমিক থেকে প্রথম স্থান অধিকারকারী রায়হান দাখিল পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫। সদ্য প্রকাশিত আলিম পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন শহীদ আবু রায়হান। স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও ছুঁতে পারলেন না। কৃতিত্বের সঙ্গে ফলাফলে উত্তীর্ণ হলেও অধরাই রয়ে গেল সেই স্বপ্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ঘাতকদের অগ্নিসংযোগে শহীদ হন আবু রায়হান।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফজলে আলম ও রেহেনা বেগম দম্পতির সন্তান আবু রায়হান। বাড়ির পাশের স্কুল থেকে প্রাথমিক শেষ করে উত্তর হরিহরপুর মাদরাসা থেকে দাখিলে জিপিএ-৫ ও আলিমে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন রায়হান। মেধাবী রায়হান ছিলেন পরিবারের একমাত্র বাতিঘর। শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ায় তাকে নিয়ে গর্ব করতেন প্রতিবেশীরা।
এর আগের সব পরীক্ষায় সন্তানের ফলাফলে মিষ্টি মুখে মুখরিত ছিলেন পরিবার ও প্রতিবেশীরা। তবে এবারের ফলাফলে সন্তানের স্মৃতি দেখে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তবুও শহীদ সন্তানের বাবা-মা পরিচয়ে ভুলে থাকার চেষ্টা করেন ছেলের অনুপস্থিতি। সন্তানের শহীদের বিনিময়ে হলেও আর কোনো প্রাণহানি ও বৈষম্য চান না রায়হানের বাবা-মা।
প্রতিবেশী শাহরিয়ার আলম বলেন, রায়হান আমার থেকে দুই বছরের ছোট হলেও আমাদের বেড়ে ওঠা একসঙ্গে। ওর মতো মেধাবী ও ভদ্র ছেলে গ্রামে খুব কম রয়েছে। ওকে নিয়ে সবার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবে। আজকের ফলাফলে সে থাকলে অনেক খুশি হত।
আরেক প্রতিবেশী জাহেদা খাতুন বলেন, এলাকার ভাতিজা হয় রায়হান। তার মেধা দেখে সবাই তাকে ডাক্তার বলে ডাকতাম। সে বেঁচে থাকলে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হত। আমরা একজন এলাকার গর্বিত ডাক্তার পেতাম।
শহীদ আবু রায়হানের মা রেহেনা বেগম বলেন, আমার সন্তানকে নিয়ে কেউ কটূ মন্তব্য করতে পারবে না। সে অনেক ভদ্র ও ভালো ছিল। আমাকে বলতো, ‘মা তোমার স্বপ্ন পূরণ করব ডাক্তার হয়ে’৷ আমার ছেলে তো জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর তো কোনো ছেলে নেই আমার। কে স্বপ্ন পূরণ করবে এখন। কী হবে আমার পরিবারের।
শহীদ আবু রায়হানের বাবা ফজলে আলম রাশেদ বলেন, আজকের আনন্দের দিনে এতটুকু ভেবে আনন্দ লাগছে যে, আমার মেধাবী সন্তান শহীদ হয়েছে দেশের জন্য। আমি একজন গর্বিত শহীদের বাবা। তাকে একজন মানবিক চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে তার রেখে যাওয়া নতুন বাংলাদেশ আবার নতুন করে সাজবে এই প্রত্যাশা।
নাফিসা হোসেন মারওয়া
‘আমার অনেক ইচ্ছা ছিল মেয়েটাকে শিক্ষিত করব। অনেক কষ্ট করে পড়াশুনাও করাইছি। কিন্তু আমার সেই ইচ্ছা আর পূরণ হইলো না। নিজের রেজাল্টটাও দেখে যেতে পারলো না। নাফিসার মৃত্যুর সঙ্গে আমার স্বপ্নও ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে।’
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাতে মোবাইল ফোনে প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত নাফিসা হোসেন মারওয়ার বাবা আবুল হোসেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সাভারে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নাফিসা হোসেন মারওয়ার। তিনি গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার শাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছিলেন।
মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হলে নাফিসা ৪.২৫ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হন। নাফিসা ও তার ছোট বোন রাইসাকে নিয়ে বাবা আবুল হোসেন টঙ্গীর এরশাদনগর বস্তি এলাকার আট নম্বর ব্লকে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।
নাফিসার বাবা আবুল হোসেন বলেন, আমি ছোট একটা চায়ের দোকান করি, আর নাফিসার মা সংসার চালানোর জন্য দেশের বাইরে থাকেন। কিন্তু মেয়েদের কখনো অভাব-অনটন বুঝতে দিইনি। আমার দুই মেয়ে, তাদের কখনো সংসারের কাজও করতে দিইনি। আমার ইচ্ছা ছিল, মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবো। কিন্তু আমার ভাগ্যই খারাপ।
এ সময় তিনি আরও বলেন, প্রথম ১৮ জুলাই নাফিসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তরায় যোগ দিয়েছিল। এরপর যখন বাসায় আসে তখন আমি বাধা দিয়েছি। নাফিসার মামার বাড়ি ঢাকার সাভারে। নাফিসা স্কুলে পড়াশুনা করেছে সাভারেই। হঠাৎ ৩ আগস্ট নাফিসা সাভারে চলে আসে। এরপর ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। সেদিনই নাফিসার মৃত্যু হয়েছে বলে নিজের কষ্টের কথা জানান বাবা আবুল হোসেন।