নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট ও সুনামগঞ্জে ২৪ ঘন্টায় স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যাসহ ৩ খুন এ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার রাতের মধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জ, নগরীর সাগরদীঘিরপারে ২ খুন, আখালিয়া নয়াবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কিশোর ও সুনামগঞ্জের হাওরে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সিলেটের গোলাপগঞ্জে স্ত্রীর হাতে মাওলানা রুহুল আমীন (৩৭) নামের এক ইমাম খুন হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে ফুলবাড়ি ইউনিয়নের হিলালপুর একটি ভাড়া বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় স্ত্রী নাদিয়া বেগমকে (৪০) আটক করা হয়।
রুহুল আমিন সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের লামা ডেমি গ্রামের শহীদুর রহমানের ছেলে। তিনি হিলালপুর একটি মসজিদের ইমামের দায়িত্বে ছিলেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় স্ত্রী নাদিয়া বেগম স্বামী রুহুল আমীনকে প্রথম অচেতন করে পরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন। এরপর তিনি রুহুল আমীনের বাবার বাড়িতে গিয়ে তাদের আত্মীয় স্বজনকে জানান- তার স্বামীকে তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। এরপর বিকেল ৫টার দিকে এলাকাবাসী বাসার খাটের নিচ থেকে রুহুল আমীনের লাশ উদ্ধার করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ স্ত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
জানা যায়, নিহত মাওলানা রুহুল আমিন গত ১৫ দিন আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। এর আগে ২০২০ সালে প্রথম স্ত্রী নাদিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। নতুন বিয়েকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটতে পারে বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা।
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্ত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে সিলেট নগরীর সাগরদীঘিরপাড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন এক যুবক। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার সময় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. শাওন মিয়া নামের ওই যুবক মারা যান। শাওন মিয়া সিলেট মহানগরীর সুবিদবাজার বনকলাপাড়া এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে তিনি ছুরিকাঘাতের শিকার হন।
শাওনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জাফর আহমদ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে সাগরদীঘিরপাড় মণিপুরী গলিতে দুর্বৃত্তরা শাওন মিয়াকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ফেলে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সিলেট মহানগরের ৮ নং ওয়ার্ডে জালালাবাদ থানাধীন আখালিয়া এলাকার নয়াবাজারে বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে এক কিশোর মারা গেছে। শনিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রুদ্র দাস (১৫) নয়াবাজারের মানিক মিয়ার কলোনির অমরচান দাসের ছেলে।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুনুর রশিদ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রুদ্র দাস ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক ছিলো। বিকেল ৩টার দিকে তার ভ্যানের ব্যটারিতে চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে পাঠায়।
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান: সুনামগঞ্জে হাওর থেকে আব্দুল আলিম (৪৫) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে জেলার সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের পাশের হিলুয়ার হাওর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। আব্দুল আলিম সুরমা ইউনিয়নের পশ্চিম সাহেবনগর গ্রামের মৃত সোলেমান মিয়ার ছেলে। মৃতদেহে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবার রাতের কোনো একসময় আব্দুল আলিমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মরদেহ গোপন করতে হাওরে ফেলে রাখে। শনিবারদুপুরে স্থানীয় কৃষি শ্রমিকরা হাওরে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে সুনামগঞ্জ থানার পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক জানান, আব্দুল আলিমের শরীরের ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।