টুডে সিলেট ডেস্ক :: দেশের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। শুক্রবার নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে এই অভিযোগ করেন তিনি।
তবে এ বিষয় একটি ভিডিও বার্তা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তার ফেসবুক পেইজে প্রকাশ করেন। এতে তিনি বলেন, ‘আমি একজন ভিকটিম। আমার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি একজন নির্বাচিত মেয়র। কিন্তু আমাকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমিসহ আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপর তারা আক্রমণ করেছে, নির্যাতন করেছে। এ জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মামলা করলাম।’ তিনি বলেন- ‘আমার মনে হয় আমিই প্রথম (অভিযোগ) শুরু করলাম। প্রায় ১৫ হাজার ভিক্টিম আছেন যারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করবেন।’
জানা গেছে, সিসিকের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর দায়েরকৃত অভিযোগে ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ‘বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের নামে’ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী, বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ এবং বাংলাদেশ পুলিশের উপর ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংগঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ড. ইউনূস ছাড়াও ৬২ অভিযুক্তদের মাঝে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়ার নাম রয়েছে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আব্দুল হান্নান, হাসিব আল ইসলাম ও আবু বকর মজুমদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগে প্রায় ৮শ’ পৃষ্ঠার নথি-পত্র যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পরই সিলেটের বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে আনোয়ারুজ্জামানও লাপাত্তা হয়ে যান। বিভিন্ন সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর তিনি সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারত যান এবং সেখান থেকে যুক্তরাজ্যে চলে যান।
হাসিনা সরকার পতনের আগে সিলেট অগ্নিগর্ভ ছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। আন্দোলনের বিভিন্ন দিন, বিশেষ করে ৪ আগস্ট সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার তুমুল সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ রয়েছে, সংঘর্ষকালে পুলিশের সঙ্গে মাঠে থাকা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা আনোয়ারুজ্জামানের অনুসারী ছিলেন।
অবস্থা পরিবর্তনের পর সিলেটের আদালত ও বিভিন্ন থানায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হয়। এখনও হচ্ছে। এসব মামলার অন্তত ২৫-৩০টি মামলায় আনোয়ারুজ্জামানকে অন্যতম আসামি করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পঞ্চম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান। ওই বছরের ৭ নভেম্বর নগরভবনে মেয়রের বসে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
তবে হাসিনা সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট সিলেটসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়। তাদের অপসারণের পর সব সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের বদলে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সিসিক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নব্বইয়ের দশকে লন্ডনে পাড়ি জমিয়ে আনোয়ারুজ্জমান প্রথমে লন্ডন মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য হিসেবেও মনোনীত হন। যুবলীগের রাজনীতি থেকে তিনি সরাসরি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন এবং বর্তমানে তিনি এ পদেই আছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।