মো. আল আমীন, জগন্নাথপুর :: সুনামগঞ্জের খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর অধ্যুষিত এলাকা জগন্নাথপুর উপজেলা। এই উপজেলার প্রধান দু’টি ফসল বোরো ও আমন ধান। এ বছর বোরো ও রোপা-আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসলের মাঠজুড়ে এখন শুধু ধান আর ধান। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এবার ভালো ফলন হয়েছে বলেও জানান কৃষকেরা। ভালো দাম পেলে এবার লাভবান হবেন বলে আশা করছেন কৃষকরা। প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান ও সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা-আমন ধান চাষাবাদ হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় নির্ধারিত লক্ষমাত্রা অনুযায়ী চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ৬শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। আমন ধান চাষাবাদে ১৩শ’ কৃষককে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়। এবার রোপা-আমন ধান চাষাবাদের মৌসুমে উপজেলার অনেক এলাকায় বন্যার কারণে সময়মতো বীজতলা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। বন্যার পানি নামার পর আমন ধানের বীজতলা তৈরি করে আমনের চারা রোপণ করতে শুরু করেন কৃষকেরা।
হলদিপুর-চিলাউড়া ইউনিয়নের সালদিগা গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর ধান গাছের অবস্থা ভালো। পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমনটা নেই। অন্যবছরের চেয়ে এইবার ভালো ফলন হবে বলে আশাবাদী।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ১০ বিঘা হাইব্রিড ও উফসী জাতের ধান চাষ করেছি। ধানের শীষ বেড়িয়েছে। দুর্যোগে ক্ষতি না হলে সময়মতো পাকা ধান ঘরে তুলতে পারবো। একই ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া বলেন, প্রথমে যে ধান রোপণ করেছিলাম হঠাৎ বন্যার পানি এসে সেই ধান তলিয়ে যায়। বন্যার পানি নামার পরে চারা কিনে এনে রোপণ করেছি। বিলম্বে রোপণ করেছি। দেখা যাচ্ছে ফলন ভালো হবে।
পাইলগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার ৩০ বিঘা জমির ধান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নামলে বিভিন্ন খাত থেকে ঋণ নিয়ে আবার ধান চাষ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন নেই। মাঠে এইবার ধানের ভালো ফলন দেখা যাচ্ছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাস বলেন, মাঠ পর্যায় গিয়ে চাষাবাদের জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, এবার উপজেলায় আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কিছু এলাকায় বন্যার কারণে বিলম্বে ধান রোপণ করা হয়েছে। বিশেষ করে আবহাওয়া অনুক‚লে ছিল এবং বৃষ্টিপাত হয়েছে এজন্য পোকামাকড়ের আক্রমণ ছিল না। কলকলি, পাটলী ও মিরপুর ইউনিয়নে ১০% ধান পেকেছে এবং ১% ধান কাটা হয়েছে। চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ফলনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ হাজার ৫শ’ ২০ মেট্রিকটন। আশাবাদী এবার উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।