মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: রাত পোহালেই দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী গোষ্ঠীর সদস্যদের কাজের সন্ধানে বের হতে হয়। মৌলভীবাজার শহর ও আশপাশ এলাকায় বসবাস করেন এমন শ্রমজীবী বহু মানুষ। প্রতিদিন তারা শহরের বিভিন্ন সড়কে শ্রম বিক্রির হাটে একত্রিত হন। সম্প্রতি কাজ দেয়ার লোক কম আসায় শ্রমবাজারে মন্দা চলছে। তাই পর্যাপ্ত কাজ জুটছে না। কাজ না পেয়ে নিরস মুখে ফিরে যেতে হয় তাদের। স্থানীয়ভাবে কামলার হাট নামে পরিচিত এসব স্থানে শ্রমজীবী মানুষের জোগান পর্যাপ্ত থাকলেও নেই কর্মসংস্থান। ফলে অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হচ্ছে শ্রমজীবী পরিবারগুলোকে।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ ভোর হলেই জেলা সদরের চৌমোহনার জড়ো হন। কোদাল, টুকরি, বেলচাসহ অপেক্ষার প্রহর গুণেন কর্মের সন্ধান পাওয়ার অপেক্ষায়।
প্রতিদিন ভোর হলেই পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডসহ শহরতলির বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত শ্রমজীবী মানুষ কাজ পাওয়ার আশায় জেলা সদরের চৌমোহনায় ভিড় করেন। ঠাÐা, গরম, ঝড়, বৃষ্টি সব উপেক্ষা করে তারা ছুটে আসেন কাজের সন্ধানে। কারও কারও ভাগ্যে কাজ জোটে। কেউবা বেকার থেকে যান। ফিরে যান শূন্য হাতে। এভাবে প্রতিদিন শহরের কামলার হাটে অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটে। তাদের জমায়েতকে ঘিরে ভোররাত থেকে ভ্যান-রিকশায় চা-বিস্কুটের দোকান সাজিয়ে ব্যবসা করেন অনেকে।
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মোহনপুর গ্রামের সাইমন বাস করেন মৌলভীবাজার শহরতলির সাবিয়া গ্রামের একটি কলোনিতে। তিনি জানান, কাকডাকা ভোরে কাজের জন্য বেরিয়ে চৌমোহনায় গিয়ে অপেক্ষা করেন। কিছুদিন ধরে রাস্তাঘাটে কাজ কম থাকায় সেভাবে ডাক পাচ্ছেন না তারা। কাজ দেওয়ার লোক অনেক কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে তাদের জীবিকায়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে খেটে খাওয়া গোষ্ঠীর অবস্থা আরও নাজুক হয়ে যাবে। তিন দিন ধরে কোনো কাজ পাচ্ছেন না কেউ। সামান্য সঞ্চয় যা ছিল, তাও শেষ হওয়ার পথে। তবে অগ্রহায়ণ মাস শুরু হয়েছে, এখন কিছু কাজ বাড়তে পারে।
একই জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আদমপুর গ্রামের মিলন খান মৌলভীবাজার শহরের বড়হাটের একটি কলোনিতে দিনমজুরের কাজ করেন। তিনিও প্রতিদিন শ্রম বিক্রির আশায় চৌমোহনার হাটে আসেন।
মিলন জানান, এখানে আসা মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে কাজের সন্ধান করেন। কেউ আসেন মাটি কাটার সরঞ্জাম নিয়ে। কেউ আসেন বেলচা, তাগার নিয়ে রাজমিস্ত্রি বা তাদের সহকারী হিসেবে কাজ করার লক্ষে। ইদানিং সবধরনের কাজই কমে গেছে। হাটে শ্রমিকের সংখ্যা বাড়লেও কাজ কমে গেছে। অনেকে কাজ পেলেও বেশ কয়েকজনকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়। এভাবেই তাদের দিন কাটে। ৫শ’ থেকে ৫শ’ ৫০ টাকা রোজে কাজ পাওয়া যায় এখানে। সব মিলিয়ে ৬শ’ টাকার মতো উপার্জন হয় গড়ে। এ দিয়েই দুর্মূল্যের বাজারেটিকে থাকার লড়াই করছেন পরিবার নিয়ে।
শ্রমিকদের একাংশ জানান, আশ্বিন-কার্তিক মাসে প্রতিবছরই কাজ কিছুটা কম হয়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে কাজের পরিমাণ বাড়ে। বিশেষ করে ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে বাড়ে চাহিদা।
এসব শ্রমিকের মতোই কাজের সন্ধানে হাটে এসেছেন লেবু মিয়া, মাসুক আলী, সাদ্দাম হোসেন, লেফাস মিয়াসহ অনেকে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তারা জানান, তাদের বাড়ি মৌলভীবাজারে না হলেও কাজের তাগিদে এখানে থাকেন। সবসময় সমানতালে কাজ পাওয়া না গেলেও এখানে তুলনামূলক কাজ ও আয়ের সুযোগ বেশি।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com