নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার :: শীতের সকালে দিগন্তজুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ। শিশির ভেজা সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুলগুলো সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। যে দিকে চোখ যায় হলুদ আর হলুদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ এমন এক দৃশ্যের দেখা মেলে মৌলভীবাজার জেলার সর্ববৃহৎ জলাভূমি হাকালুকির হাওরাঞ্চলে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে বাড়ছে সরিষার চাষ। এতে বদলে গেছে মৌলভীবাজার হাওরপারের জনপথ।
সম্প্রতি জেলার বড়লেখা উপজেলার হাওরপারের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, শীতের এ মৌসুমে হাকালুকির বুকে হলুদ ফুলের ঢেউ। তা দেখে যে কারোরই মন ভরে যাবে মুগ্ধতায়।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হলেও, উৎপাদন ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে অতিরিক্ত ২ হাজার হেক্টর পতিত জমি সরিষা চাষের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গত বছর জেলার বড়লেখা উপজেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল। এ বছর ২ হাজার ৫৫০ হেক্টরে সরিষার আবাদ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, জেলার সিংহভাগ সরিষা উৎপাদন হয় বড়লেখা উপজেলায়। পাশাপাশি ওই এলাকায় সরিষার জমির পাশেই মৌ চাষ বেড়েছে। সরিষা মাঠে কিংবা বাড়ির পাশে বাক্স বসিয়ে মৌ চাষিরা মধুও সংগ্রহ করছেন। ফলে সরিষা চাষি ও মৌ চাষি উভয়েই লাভবান হওয়ায় সরিষা চাষ বেড়েছে।
চাষিরা জানান, এবার বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭, বারি সরিষা-১৮, বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-১১ জাতের চাষ হয়েছে।
হাওড়পারের বিভিন্ন গ্রামে সরিষা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরিষার শুকনো গাছ বর্ষাকালে হাওর পারের চাষিরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সরিষার খৈল গোখাদ্য হিসেবে চাষিদের কাজে আসে। পারিবারিক ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করে অনেকেই সরিষার চাষে বাড়তি আয় করেন। পাশাপাশি অনেকেই মৌ চাষ করছেন। হাওর পারের খেতে ২ শতাধিক মৌ বাক্স রয়েছে। এতে মধু হয়, আবার প্রাকৃতিক পরাগায়ণের কারণে সরিষার উৎপাদন বাড়ে। তাই চাষিরা সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। পাশাপাশি আমন ও বোরো আবাদের মধ্য সময়ে সরিষা চাষ করা যায় বলেই চাষিদের মাঝে সরিষা চাষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
হাওরপারের চাষি জয়নুল মিয়া বলেন, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে দেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওড়ের পানি সরে গেলে হাওরপারের উর্বর জমি এমনিতেই অনাবাদি পড়ে থাকে। এসব জমিতে বছরের পর বছর কোনো রকম চাষাবাদ হয় না। তবে গত কয়েক বছরে কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার ফলে হাওরপারের পতিত জমিতে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বেশকয়েক বছর ধরে সরিষা চাষ করছেন চাষি আজাদ আহমেদ। তিনি জানান, সরিষা চাষে সময় ও সেচের প্রয়োজন কম। আবার বীজের কোনো সমস্যা হয় না। সব মিলিয়ে কম খরচে বেশি লাভের জন্য বোরো লাগানোর আগে সরিষাই এখন সেরা ফসল।
তবে অল্প দিনে বেশি ফলনের আশায় সরিষা উত্তোলন করে ফের বোরো আবাদ করতে পারেন বলে এটাকে লাভের ফসল হিসেবে দেখছেন স্থানীয় চাষি চুনু মিয়া ও ইব্রাহিম মিয়া।
বড়লেখা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, চাষিদের বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেওয়ার ফলে প্রতিবছর হাওরে সরিষার আবাদ বাড়ছে। কৃষকদের আগ্রহও দিন দিন বাড়ছে। সরিষা চাষে আগ্রহীদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সবধরনের সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হলেও, উৎপাদন ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে অতিরিক্ত ২ হাজার হেক্টর পতিত জমি সরিষা চাষের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ব্যাপক সরিষার আবাদ বৃদ্ধির ফলে সরিষা চাষের সঙ্গে মধু চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com