মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
ঝাল ছাড়া ঝালমুড়ি জমেই না। নাগা মরিচের (বোম্বাই মরিচ) ঝালের আলাদা এক টেস্ট। যারা ঝাল খেতে পছন্দ করেন, তারা এই ঝালমুড়ি খান। কেউ কেউ আস্তা একটা নাগা মরিচ খেয়ে ফেলেন। তবে কম ঝাল খাওয়া মানুষও মুড়ি খেতে আসেন। তাদের জন্য কম ঝাল দিয়ে মুড়ি তৈরি করি। –এমন কথাগুলো বলছিলেন ঝালমুড়ি বিক্রেতা মো. কামাল মিয়া। থাকেন পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে। তিনি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বারের সম্মুখে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন।
সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, আগে তিনি শুধু চানাচুর দিয়ে এক পদের ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। এখন সময়ের সঙ্গে ঝালমুড়ির সঙ্গে ফুচকা, ঘুগনি, ছোলা ও নাগা মরিচ যোগ করেছেন; এতে স্বাদে এসেছে ভিন্নতা। সেই ঝালমুড়ি খেয়ে অনেক পর্যটক তৃপ্তি নিয়ে ফেরেন গন্তব্যে।
শুক্রবার, শনিবার ছাড়াও যেদিন পর্যটকদের সমাগম বেশি থাকে, সেসময় দিনে তিন থেকে পাঁচ কেজি ঝালমুড়ি বিক্রি হয়। মুড়িতে ঝাল নিশ্চিত করতে প্রতিদিন এক কেজির বেশি মরিচ ও ১৫-২০টি নাগা মরিচ লাগে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন তিনি। অনেকেই সেই ঝালমুড়ি খাওয়ার পাশাপাশি শুধু নাগা মরিচ নিয়ে যান পরিবারের জন্য। প্রতিপিস নাগা মরিচ বিক্রি করেন ৫ টাকায়। এছাড়া, পর্যটকদের নিয়ে আসা গাইড ও যানবাহনের চালকসহ স্থানীয়রা কামালের ঝালমুড়ি খেয়ে যান।
নিজেই ঝালমুড়ি তৈরির কৌশল শিখেছেন জানিয়ে কামাল বলেন, ২২ বছর ধরে ব্যবসা করছি, প্রথমে নিজেই ঝালমুড়ির মসলা তৈরি করতাম। মুড়ি খেতে আসা লোকজন বিভিন্ন পরামর্শ দিলে সেগুলো গুরুত্ব দিতাম এবং ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী ঝালমুড়ি তৈরি করি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মুড়ি বিক্রি হয়।
ব্যবসা শুরুর দিকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান, আগে দুই টাকা থেকে পাঁচ টাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। সে সময় পাঁচ টাকায় খুব কম মানুষ ঝালমুড়ি খেত। মুড়িসহ এখন সব জিনিসের দাম তিন–চার গুণ বেশি বেড়েছে। এখন বাজারদর ব্যবসায়ও প্রভাব ফেলেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে মুড়ি, চানাচুর, ছোলা, তেল, মসলাসহ অন্যান্য জিনিসের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ঝালমুড়ির দাম বাড়াতে হয়েছে। এখন চাইলেও কম দামে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে পারি না। তারপরও প্রতিদিন চার–পাঁচশত টাকা আয় হয়।
কামাল মিয়ার সাথে আলাপকালে স্থানীয় অটোচালক ফয়েজ মিয়া দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায়ই পর্যটকদের এখানে নিয়ে আসি। আসা যাওয়ার পথে অনেক পর্যটক এখানে ঝালমুড়ি খান এবং নাগা মরিচ কিনে নিয়ে যান।
আরেক অটোচালক মনির হোসেন বলেন, এখানকার ঝালমুড়ির আলাদা স্বাদ রয়েছে। এটি মুখরোচক খাবার, পর্যটক নিয়ে আসলে স্বাদের জন্য তাদের সঙ্গে ঝালমুড়ি খেয়ে যাই।
এখানে এসে ছোট্ট দোকানে বোম্বাই মরিচ দেখেই লোভ সামলাতে পারিনি। বোম্বাই মরিচ দিয়ে ঝালমুড়ি খেতে এসেছি। দারুণ লেগেছে। কয়েকটি বোম্বাই মরিচ নিয়ে যাবো, বলছিলেন খুলনা থেকে পরিবার নিয়ে আসা পর্যটক জিনাত ফেরদৌস।
ঝালমুড়ি তৈরির মসলা, ছানা ভুনাসহ অন্যান্য জিনিস তৈরির কাজে কামালকে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী। চার সন্তান ও মাকে নিয়ে তাদের সাতজনের সংসার।
জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে সংসারের খরচ বেড়েছে বলে জানান কামাল। আগে দিনে যে টাকার বাজার খরচ লাগতো, এখন টাকা লাগছে দ্বিগুণের বেশি। খরচের সঙ্গে হিসাব মেলাতে পারছেন না। ফলে দৈনিক যা আয় হয়, তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি।
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com