১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

add

অসহনীয় গরমে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন

todaysylhet.com
প্রকাশিত ১৫ জুন, রবিবার, ২০২৫ ২২:৪৬:২১
অসহনীয় গরমে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বৈশাখ শেষে এসেছে আষাঢ়। এই সময়ে সিলেটে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দিনে আগুন রোদ ও গরমে খাঁ খাঁ করে চারদিক। রাতেও কমছে না তাপমাত্রা। প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জন জীবন। চারিদিকে রোদে খা খা করছে। প্রচন্ড গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। সেই সাথে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যায় মানুষের অবস্থা নাজেহাল। গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে মানুষ ছুটছেন গাছের ছায়ায়। আবার অনেকে ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম খেয়ে স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। গরমের কারণে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি। ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।

শবিবার (১৫ জুন) সারাদিন সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের রাস্তাঘাটে দেখা যায় গরমের চোটে মানুষের হাঁসফাঁসের চিত্র। তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা প্রতিটি শ্রেণিপেশার মানুষের। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জীবন যেন নাজেহাল। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের। এ সময় অনেকে ঘাম ঝরা দেহ নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে দিনের বেলায় কাঠফাটা রোদ। আর এই রোদে পুড়ছে কৃষকের মাঠঘাট। বাসা-বাড়ি ও পথঘাটের প্রচ- তাপ, কোথাও স্বস্তি নেই। ফলে বেড়েছে দাবদাহ। অসহনীয় গরমে মানুষের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর প্রভাবে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ কোনো কাজই ঠিকমতো করতে পারছে না। অফিস-আদালতের কর্মজীবীদেরও ওষ্ঠাগত অবস্থা। তীব্র গরমে তারা ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারছে না। সেই সাথে গাইবান্ধায় ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জনগনের ওষ্ঠাগত অবস্থা।

 

বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। কাঠফাঁটা রোদ আর অসহনীয় গরমে কৃষক মাঠে কাজ করতে পারছে না। সেই সঙ্গে রিকশাচালক, সিএনজি, আটোরিকশা ও ভ্যান চালকদেরও একই অবস্থায়। অনেকে জীবিকার তাগিদে বাড়ি থেকে বের হলেও রোদ-ভ্যাপসা গরমে অস্থির হয়ে উঠছেন। বাধ্য হয়ে তারা ফিরছেন বাড়িতে। এর ফলে শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে।

 

রিক্সা চালক শিবা মিয়া জানান, ‘যে গরম পড়ছে বাবা যাত্রীও নাই তার মধ্যে রোদ! কামাই রোজগারও কম। খুব খারাপ অবস্থায় আছি। গরম কেমন পড়ছে, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। এটা তো ধনী-গরিবের জন্য আলাদা হয় না। তারপরও যাদের গাড়ি আছে, তারা এসির মধ্যে শান্তিতে থাকতে পারে, বাড়ি ও অফিসে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে বসে থাকতে পারে। আর আমাদের মতো গরিবের এই গরমের মধ্যেই কষ্ট করে ভাত জোগাতে হয়। গরমের কারণে আমাদের মতো গরিব মানুষ অনেকে অসুস্থ হচ্ছে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে গরমের তারনায় ঘন ঘন লেবু পানি খেতে হচ্ছে। সারা দিনের আয় মাত্র তিন-চারশ টাকা। এরই মধ্যে খাওয়া খরচ ও থাকা খরচ বহন করে বাড়ি টাকা পাঠাতে হচ্ছে। গরমে শুধু যে কষ্ট হচ্ছে তা নয়, আয়-রোজগারও কমেছে। একদিকে গরমের কারণে বেশিক্ষণ রিকশা যেমন চালানো যায় না, আরেকদিকে যাত্রীও তেমন পাওয়া যায় না। মানুষ গরমের কারণে দিনে বাসা থেকে তেমন বের হয় না।’

 

দিনমজুর ইসলাম আলী জানান, ‘ভাইরে গরমের কারণে বাইরে যেতে পারছি না! কাম না করলে খামো কি! এই গরম যে কতদিন থাকবে আল্লাহ জানেন।’

 

চায়ের দোকানদার জামাল আহমদ বলেন, ‘গত একসপ্তাহ ধরে গরমের মাত্রা বেড়েছে। ফলে মানুষ ঘর থেকে দিনেরবেলা কম বের হয়। ব্যবসার অবস্থাও ভালো না। আগে প্রচুর মানুষ রাস্তায় থাকতো, বেঁচা-বিক্রি ভালো হতো। এখন সন্ধ্যার পর ছাড়া সারাদিন বেঁচা-বিক্রি নামমাত্র। রিকশাচালকরা ছাড়া তেমন কোনো মানুষ আসে না। তারা আসেন একটা রুটি অথবা বিস্কুট খায় এবং পানি খায় দুই-তিন।’

 

এপ্রিলে তাপপ্রবাহ স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এবারের তাপমাত্রা বেড়েছে ক্রমান্বয়ে। রোদের প্রখরতাও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। ইতোমধ্যে দুটি রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রা। এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই বছর সিলেটে এই ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে।

 

এদিকে শনিবার (১৪ জুন) আবহাওয়া অফিসের বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আগামী ৭২ ঘণ্টায় সিলেটসহ সারাদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সেই সঙ্গে ভারি বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।