টুডে সিলেট ডেস্ক :: সিলেটে হঠাৎ করে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সিলেট মহানগরীতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল জাতীয় অ্যান্টিসেপটিক পণ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্র, ফার্মেসী, সুপার শপ ও সাধারণ বাজারে এসব জীবাণুনাশক পণ্য অনুপস্থিত থাকায় জনসাধারণ এবং চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গভীর সমস্যায় পড়েছে।
বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসলের সঙ্কট দেখা দেওয়ার ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
সরেজমিনে দেখা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসলের চাহিদা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। ফলে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে এসব স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষ পড়েছেন তীব্র দুর্ভোগে। বেশিরভাগ ফার্মেসী ও অধিকাংশ দোকানেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল নেই। যেসব সুপারশপে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল কিছুটা আছে, সেখানে দাম স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ বা তিনগুণ। সিলেট নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসী, কসমেটিকস দোকান ও সুপারশপে গিয়ে দেখা যায়- হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসলের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ নেই বললেই চলে। অনেক দোকানেই খালি বোতল ঝুলিয়ে রাখতে দেখা গেছে ‘স্টক আউট’ লেখা।
অন্যদিকে, যেসব দোকানে এখনো কিছুটা পণ্য মজুদ আছে, সেগুলোর দাম আকাশছোঁয়া। সাধারণ ২০০ মি.লি. স্যানিটাইজারের দাম ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে গেছে। হেক্সিসলের ১০০ মি.লি. বোতল যা আগে ছিল ৪৫ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
নগরীর আম্বরখানা এলাকার একটি সুপার শপের মালিক ইব্রাহিম মিয়া বলেন,‘গত তিন দিন ধরে কোনো স্যানিটাইজার পাইনি। প্রতিদিনই গ্রাহক এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।’
আবার ক্রেতারা বলছেন, ‘সঙ্কটকে পুঁজি করে কিছু ব্যবসায়ী অসাধু মুনাফার চেষ্টা করছেন।’
সিলেটের মিরাবাজার এলাকার ফার্মেসী মালিক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে হেক্সিসলের কোনো চালান আসেনি। কোম্পানির লোকজন বলছে, ঢাকায় উৎপাদনেই ঘাটতি চলছে। আমাদের ফার্মেসীতে যেটুকু ছিল, তা অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘জরুরি ভিত্তিতে রোগীর যত্নে হেক্সিসল ও স্যানিটাইজার অপরিহার্য। কিন্তু গত কয়েকদিনে হাসপাতাল স্টোর থেকে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসলের সঙ্কটের পেছনে উৎপাদন ও পরিবহন সমস্যা, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়াকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে কোভিড পরবর্তী সময়ে মানুষ জীবাণুনাশক ব্যবহারে আরও বেশি সচেতন হলেও বাজারে এর পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত হয়নি। বর্ষাকালে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, চর্মরোগসহ নানা জীবাণুবাহিত রোগ বাড়ে। এই সময় হাত পরিষ্কার রাখা এবং অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বেশি। তবে সরবরাহ সঙ্কটে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।
নগরীর চৌহাট্টা এলাকার সেন্ট্রাল ফার্মেসীর মালিক বলেন, ‘সিলেটে আবার করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং অ্যান্টিসেপটিক জাতীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল সঙ্কটের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অচিরেই সঙ্কট নিরসনের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। তবে যদি সরকারিভাবে তদারকি করা হয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে এই ধরনের সঙ্কট এড়ানো সম্ভব হবে।’
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়ছে, তবে আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছি। স্যানিটাইজার ও স্বাস্থ্য উপকরণের সরবরাহ বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের তাদের পণ্য উৎপাদনের একটি সীমা থাকে। সেই সীমা অতিক্রম করলে দেখা যায় বাজারে সাময়িক সঙ্কট তৈরি হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আসলে এই সঙ্কট কেন হচ্ছে তা আমরা খতিয়ে দেখবো। পাশাপাশি বাজারে অ্যান্টিসেপটিক জাতীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা অবহিত নই। তারপরও আমরা বাজারে এই বিষয়ের খোঁজ নেব এবং এর পেছনে কোনো কারসাজি কিংবা কারো হাত আছে কি-না আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’
Editor-in-Chief and Publisher: Mohammed Imran Ali, Executive Editor: Ahmed Ferdous Shakar, News Editor: Ahia Ahmed. E-mail: news.todaysylhet24@gimal.com
www.todaysylhet.com