১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

add

শিক্ষার্থীদের অনন্য উদাহরণ: ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান

todaysylhet.com
প্রকাশিত ১২ আগস্ট, সোমবার, ২০২৪ ২৩:০৮:১৬
শিক্ষার্থীদের অনন্য উদাহরণ: ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান

সম্পাদকীয় :: বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—প্রতিটি আন্দোলনে সাফল্যের পেছনে রয়েছে ছাত্ররাজনীতির অবদান। এ রকমই আরেকটি আন্দোলনের ইতিহাস রচিত হলো বাংলাদেশে। গঠিত হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত শনিবার রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র শহীদ আবু সাঈদের মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিতে তাঁদের বাড়িতে যান।

এরপর তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশকে একটি পরিবার উল্লেখ করে বলেন, ‘এর চেয়ে সুন্দর পরিবার আর নেই। পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে, কিন্তু এত সুন্দর পরিবার নেই।’

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এই কথাগুলো নিঃসন্দেহে প্রণিধানযোগ্য। কারণ বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে।
একে অন্যের পাশে দাঁড়ায়। বিপদে-আপদে হাত বাড়িয়ে দেয়। আমরা কিছু উদাহরণ তুলে ধরার চেষ্টা করি। যেমন—সরকার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে ভেঙে পড়ে।

থানা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই উদ্বিগ্ন পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সারা দেশে শুরু হয় ব্যাপক নৈরাজ্য। ডাকাতির পাশাপাশি লুটপাট, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ মানুষের বাসাবাড়িতে হামলা চালিয়ে করা হয় অগ্নিসংযোগ। সেই থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে চলতে থাকে ব্যাপক ডাকাতি, ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধমূলক কাজ।

অন্যদিকে ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।

এখানেও শুরু থেকে এগিয়ে এসে দায়িত্ব নেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, কাঁটাবন, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল, বাংলামোটর, মিরপুর রোড, আসাদগেট ও মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীজুড়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। রাজধানী ঢাকা শুধু নয়, টাঙ্গাইল শহরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই দৃশ্য দেখা গেছে ফরিদপুরসহ দেশের অন্যান্য শহরেও। সড়কে অবস্থান নিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। কারো হাতে লাঠি, মুখে বাঁশি। ট্রাফিক পুলিশের মতো ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন তাঁরা। শহরকে ভালোভাবে সাজাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সময় রাজধানীতে বিভিন্ন স্থাপনা-দেয়ালে নানা ধরনের মন্তব্য-স্লোগান লিখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এখন তাঁরাই সেগুলো মুছে ফেলছেন। একই সঙ্গে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে রাস্তায় জমে থাকা ইটপাটকেল ও আবর্জনা পরিষ্কারের অভিযানেও নেমেছেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা সড়ক ও বিভিন্ন স্থাপনা পরিষ্কার করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলার পর অপরিচ্ছন্নতা দূর করতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থীকে টিএসসি, লাইব্রেরি চত্বর, কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবন, অপরাজেয় বাংলার আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে দেখা গেছে।

 

দেশ ও দশের স্বার্থে শিক্ষার্থীদেরই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। তার উদারহরণ বাংলাদেশে অতীতেও ছিল। নতুন করে আবার তৈরি হলো।