নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি নং-৭০৭) বঞ্চিত শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি ‘কুক্ষিগত’ করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাদের মধ্যে এই ক্ষোভ। গত বুধবার এ নিয়ে তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সংগঠনের কার্যালয় পর্যন্ত যায় বঞ্চিত শ্রমিক ও ছাত্র-জনতা। সিলেট জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেটের পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে শীর্ষ সংগঠন। এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। সংগঠনের সভাপতি সিলেটের পরিচিত শ্রমিক নেতা জাকারিয়া আহমদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ সংগঠনের সভাপতিত্ব করছেন।
বঞ্চিত থাকা শ্রমিকদের অভিযোগ, সংগঠনের সভাপতি জাকারিয়া আহমদের নেতৃত্বে সিলেটের কয়েকজন শ্রমিক নেতা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। একই সঙ্গে মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মতো চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।
বিশেষ করে নাম্বার প্লেট বিহীন গাড়ি তাদের নেতৃত্বে টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। তাদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। বুধবার থেকে নতুন করে শুরু হয় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
নগরের শেখঘাট জিতু মিয়ার পয়েন্টে রয়েছে অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের স্ট্যান্ড। কয়েকজন শ্রমিক জানা, গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা নগরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এই অবস্থায়ও চালকদের কাছ থেকে বর্তমান কমিটির বর্তমান দায়িত্বশীলদের নির্দেশে নগরের সবক’টি স্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। প্রত্যেক সিএনজি অটোরিকশাচালকের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ টাকা হারে চাঁদা গ্রহণ করা হয়। এই অবস্থায় বঞ্চিত চালকরা বিষয়টি জিতু মিয়ার পয়েন্ট এলাকায় সড়কে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের জানান। শিক্ষার্থীরা এ সময় প্রকাশ্যে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দায়িত্বে থাকা শ্রমিকদের অনুরোধ করেন। কিন্তু তাদের অনুরোধের পরও টাকা উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় একপর্যায়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরে শিক্ষার্থী ও বঞ্চিত শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয় সেনাবাহিনীকে। ঘটনা শুনে সেনাবাহিনীর টহলে থাকা একটি টিমকে নিয়ে বঞ্চিত শ্রমিকরা যান শ্রমিক সংগঠনের ভার্থখলাস্থ প্রধান কার্যালয়ে। সঙ্গে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীরাও।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, সেনাসদস্যরা কার্যালয়ে গেলে সেখানে সংগঠনের ক্যাশিয়ার শাহাবুদ্দিনকে পান।
পরে তারা এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে সভাপতি জাকারিয়া আহমদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সংগঠনের সভাপতিকে টাকা উত্তোলনের হিসাব সহ বৈধ কাগজপত্র নিয়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলে চলে আসেন। পাশাপাশি প্রকাশ্যে টাকা উত্তোলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন সেনাসদস্যরা।
এদিকে শ্রমিক সংগঠনের নানা অনিয়ম তুলে ধরে বৃহস্পতিবার বঞ্চিত অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিকরা নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় মানববন্ধন করেছেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
বঞ্চিত শ্রমিক নেতা মুরাদ আহমদ জানান- বেশির ভাগ শ্রমিক চাঁদাবাজি বন্ধ চায়। এ কারণে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির ঘটনা বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের নজরে আনলে তারা টাকা উত্তোলন বন্ধ করতে অনুরোধ করেছিলেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়। তিনি বলেন- সভাপতি জাকারিয়ার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে। এরা গত প্রায় ৩০ বছর ধরে ক্ষমতা ধরে রেখে শ্রমিকদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এদের দুঃশাসনের অবসান চাচ্ছেন বঞ্চিত শ্রমিকরা।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও শ্রমিক নেতা মো. সালমান জানিয়েছেন, অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নামে নগরজুড়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। যারা সংগঠনের সদস্য তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। একই সঙ্গে নাম্বার প্লেট বিহীন অবৈধ অটোরিকশাকে টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে সড়কে চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। অসাধু ট্রাফিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এসব করা হচ্ছে।
তিনি জানান- বুধবার সেনা সদস্যরা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ দিলেও বর্তমান কমিটির নেতারা সেটি মানেননি। তারা আগের মতোই চাঁদাবাজি করছেন। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ জানান, সেনা সদস্যরা আমাদের হিসাব চায়নি, কিংবা আমাদের তাদের কার্যালয়ে যাওয়ার কথাও বলেনি। তারা বলেছে যে, টাকা তোলা হয় সেটি যেন অফিসে তোলা হয়। আমরা জানিয়ে দিয়েছি টাকা সড়কেই তুলতে হবে। অফিসে তোলার কোনো সুযোগ নেই।