ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সরকার বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইনগত দিন ভালোভাবে দেখে তা বাস্তবায়ন করবে সরকার, যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামায়াত স্বাধীন দেশে আর রাজনীতির কোনো সুযোগ না পায়।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের যৌথসভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সেতুমন্ত্রী।
আদালতের রায়ে ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ১৯ জুলাই রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ১০ দিনের মাথায় গতকাল আবারও জোটের জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন জোটের নেতারা।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের যৌথসভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জামায়াত ধর্মের নামে মুখোশধারী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। বিভিন্ন সময় নাশকতা, সহিংসতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে দলটির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য ১৪ দলের সভায় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। অনেকদিন থেকেই সে দাবি করে আসছিল অনেকে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের জন্য আইনি বিষয়টি ভালোভাবে দেখে সরকার শিগগিরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে, যাতে কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে এই অপশক্তি স্বাধীন বাংলাদেশে আর কোনো সুযোগ না পায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, পরবর্তী গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও এই দাবি করা হয়েছিল। সর্বোচ্চ আদালতের রায়েও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে হিটলারের নাৎসি পার্টি জার্মানিতে রাজনীতি করতে পারে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে রায় আছে।
গুজব ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকবে হবে। গুজব-আতঙ্ক সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এ নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে।
কোনো নিরপরাধ মানুষকে যেন গ্রেফতার করা না হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে নিরপরাধ কাউকে জড়ানো যাবে না। অতি উৎসাহিত হয়ে যাতে নিরপরাধ কাউকে গ্রেফতার করা না হয়, সে বিষয়ে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি, বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ড. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।