টুডে সিলেট ডেস্ক :: সিলেট অঞ্চলে নিবন্ধন ছাড়াই চলাচল করছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নৌকা। এগুলো কখনও সীমান্ত এলাকার নদীতে চোরাচালানের পণ্য; কখনও ব্যবহৃত হয় অবৈধ বালু ও পাথর পরিবহনে। বিভিন্ন সময় অভিযানে জব্দ করা হলে নৌকার মালিকানা নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। নৌযান আটকে থাকে মাসের পর মাস। এমন পরিস্থিতিতে মালিকানা সহজীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সম্প্রতি বিভাগের সব জেলা প্রশাসককে চোরাচালান রোধে এসব নৌকা নিবন্ধনের আওতায় আনতে চিঠি দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
সিলেটের কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিবন্ধন দেওয়া গেলে নৌযানের মালিকানা প্রমাণ সহজ হবে। একই সঙ্গে অপরাধে জড়ানো নৌযান দ্রুত শনাক্ত করা যাবে।
জানা যায়, অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল আইনে নৌপথে চলাচলকারী ১০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের স্টিল বডি নৌকার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ১০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের নৌকার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হওয়ায় মালিকদেরও এ বিষয়ে গরজ নেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বালু, পাথর, চুনাপাথর ও কয়লা নিতে বাল্কহেড, বার্জ, কার্গোর মতো নৌযান আসে সিলেট অঞ্চলে। এর বাইরে সিলেটের সুরমা, সারি, গোয়াইন, ধলাই, পিয়াইন, লোভা; সুনামগঞ্জের সুরমা, চেলা, যাদুকাটা, পাটলাই; মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা, মনু, সোনাই; হবিগঞ্জের খোয়াই নদীতে নিবন্ধনহীন হাজার হাজার নৌকা চলাচল করছে। এগুলো সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্তবর্তী কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় বালু, পাথর ও কয়লা বহন করে।
এসময় প্রায়ই অপরাধের অভিযোগে জব্দ করা হয় ৫০০ ফুট থেকে আড়াই হাজার ফুটের এসব নৌকা। কিন্তু নিবন্ধন না থাকায় আটকের পর মালিকানা প্রমাণ নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় মালিকদের। গত দুই বছর সিলেট ও সুনামগঞ্জে অন্তত ৬৫টি নৌকা জব্দের ঘটনা ঘটে।
গত ১ সেপ্টেম্বর ছাতকের সোনালী চেলা নদীতে ভুলে জিরো লাইন অতিক্রম করায় ৭টি নৌকা জব্দ করে ৪৮ বিজিবির সদস্যরা। নৌকার মালিক ছাতক শহর এলাকার বাসিন্দা মো. জাকির, আবু শামা, পাটিভাগের ওয়াহিদুর রহমানসহ অন্যরা শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। পুরাতন নৌকা কেনায় ছিল না কাগজপত্র। নৌকা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কাগজ ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রমাণপত্র বের করতে গিয়ে মালিকদের গলদঘর্ম অবস্থা।
সুনামগঞ্জ জেলা ট্রলার, বাল্কহেড, নৌ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, সব নৌকা নিবন্ধনের আওতায় এলে কাউকে সমস্যায় পড়তে হবে না। মালিকানা প্রমাণ সহজ হবে। কারণ অনেক নৌকা দুই থেকে তিনবার বিকিকিনি হয়। গ্রামাঞ্চলে বেচাকেনায় কাগজপত্রের ধার ধারে না।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ জানান, নৌকার নিবন্ধন জরুরি। কাস্টমসের চিঠির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।