টুডে সিলেট ডেস্ক :: সিলেটে দুর্গন্ধযুক্ত খাসির মাংস নিয়ে এলাকার মানুষের তোপের মুখে পড়েছে মুখরোচক খাবারের প্রতিষ্ঠান সুলতান’স ডাইন। গত মঙ্গলবার (১অক্টোবর) বিকেলে সিলেট নগরীর দাঁড়িয়াপাড়াস্থ মাংস সংগ্রহশালা থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় জড়ো হয়ে অভিযান চালায় স্থানীয় কিছু যুবক।
এই ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে হাজির হলে সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে যাতে সংবাদ প্রকাশ না হয় তার জন্য সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে শুরু করেন তোড়জোড়।
এরপরে কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দৃষ্টিগোচর হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। তার নির্দেশে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সিলেট জেলা স্যানেটারি পরিদর্শক ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তার একটি দল সুলতান ডাইনের বিষয়ে তদারকিতে যান।
এরই মধ্যে মূল ঘটনাস্থলে না গিয়ে বা সিসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের কোন ধরণের অফিসিয়াল পত্র, নির্দেশনা ছাড়া জেলা স্যানেটারি কর্মকর্তাসহ আরেকজনের ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থলে না গিয়েই এমন ভিডিও নিয়ে ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সিসিকে সংযুক্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২ জন খাদ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ২জন স্যানেটারি ইন্সপেক্টর পরিদর্শনে যান। তারা সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ সুলতান’স ডাইনের মাংস সংগ্রহশালা দাড়িয়াপাড়া ইমন হাউজিংয়ে না গিয়ে রেঁস্তোরা পরিদর্শন করে সাফাই গেয়েছেন, যা নিয়ম বহির্ভূতভাবে করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক কর্মকর্তারা।
সুলতান’স ডাইন পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তারা হলেন- সিলেট সিটি করপোরেশনে সংযুক্ত স্যানেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষন দাস ও আব্দুল মুমিত, নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এবং মনিতা রানী।
সুলতান’স ডাইন পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সাফাই গেয়ে বক্তব্য দেওয়া কর্মকর্তারা ঘটনার উৎপত্তিস্থল দাড়িয়া পাড়া ইমন হাউজিং পরিদর্শনে যাননি। উপরন্তু স্যানেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষন পাল ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে দোষারূপ করে সুলতান’স ডাইনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, এমন মন্তব্য করেন। তারা সুলতান’স ডাইনের গুণগত মান ও পরিচ্ছন্নতার প্রশংসা করেন। তাদের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তারা।
এবিষয়ে কথা হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি বলেন, সুলতান’স ডাইন পরিদর্শনে যাওয়া দুজন স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ও ২জন নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক একসাথে যান। তাদেরকে পাঠানো হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে ও মাংস কোথা থেকে আসে না আসে সেটা জানতে। কিন্তু তাদের পক্ষে গিয়ে সাফাই গাওয়ার জন্য পাঠানো হয়নি। বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ারও তাদের নেই। তারা কেবল দেখে এসে প্রতিবেদন দিতে পারতো। তাদের এই বক্তব্যের দায় আমি নিতে পারবো না। তাছাড়া সুলতান’স ডাইন তাদের পক্ষে সাফাই গাইতে নিয়ে গেছে কি না এবং আর্থিক কোনো সুবিধার বিনিময়ে তারা এহেন কর্মকাণ্ড করেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, রোববার (৬অক্টোবর) সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তাদের যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে সিটি করপোরেশনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্যানেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষন পাল বলেন, গণমাধ্যমে প্রতিবেদন দেখে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনুমতি দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি। আমরা সেখানে কোনো মিডিয়ায় বক্তব্য দেইনি। তবে সুলতান’স ডাইন’র ভালো দিক ও নেতিবাচক দিক তুলে ধরি। তারা পুরো বক্তব্য রেকর্ড করে ভালো দিকটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়েছে। যদিও নিজের বক্তব্য দেওয়াকে অজ্ঞতা ছিল বলে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, মূলত ঘটনাস্থল দাড়িয়াপাড়াস্থ যে বাসায় মাংস সংরক্ষণ করা হতো বা যেখান থেকে সুলতান’স ডাইনে মাংস দেয়া হয়, সে স্থানে তারা যাননি এবং স্থান সম্পর্কে তারা জানতেনও না। তবে সুলতান’স ডাইন পরিদর্শন করলেও এবিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দেননি তারা।
এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চারজন সুলতান’স ডাইন পরিদর্শনে যাই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে। তার কথা মতোই পরিদর্শনে গিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পাই। পরিদর্শনকালে তারা পঁচা মাংসের বিষয়টি অস্বীকার করে। সেখানে কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে কথা বলে, সেই বক্তব্য অজ্ঞাতসারে তারা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেবো।
উল্লেখ্য- গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় ইমন হাউজিং নামক টিনশেড বাসা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। সংগ্রহশালা থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে অভিযান করেন স্থানীয় কিছু যুবক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরীর দাড়িয়াপাড়া এলাকার ইমন হাউজিংয়ে একটা বাসা থেকে কয়েক দিন ধরে দুর্গন্ধ আসছিল। এতে চরম ক্ষুব্ধ ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কয়েকজন স্থানীয় যুবক সেখানে যান এবং দেখতে পান ওই বাসায় খাসির মাংস মজুত করে রাখা আছে। পরে জানা তারা জানায় এগুলো সুলতান’স ডাইনের খাসির মাংস। এ সময় তারা পঁচা মাংসের অভিযোগ তুললে, তাদের তোপের মুখে পড়েন সেখানকার দায়িত্বরতরা। তারা জানান, এগুলো ঢাকায় জবাই করা মাংস। সেখানে জবাই করার পর সিলেটে আনা হয়। এসময় যুবকরা স্থানীয় মুরব্বিদের শরণাপন্ন হলে তারা সুলতান’স ডাইনের ম্যানেজারকে অবহিত করলে তারা এসে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাসায় বসে বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করেন।
এবিষয়ে সিলেটের নিরাপদ খাদ্য অফিসার সৈয়দ সারফরাজ হোসেন বলেন, ‘তাপমাত্রা মাইনাস ১২-১৮–এর মধ্যে থাকে তাহলে উনারা মাংস রাখতে পারবে। ডিপেন্ড করতেছে ওখানে উনারা টেম্পারেচার কন্ট্রোল করছেন কি না। ঢাকা থেকে আনার সময় ফ্রিজিং ভ্যান ব্যবহার করছেন কি না। সংরক্ষণের জায়গায় ফ্রিজিং ব্যবস্থা কেমন? যদি কোল্ড চেইন মেনটেইন হয়, তাহলে এ রকম দুর্গন্ধ হওয়ার কথা নয়। পচন ধরতেই দুর্গন্ধ হয়।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সুলতান’স ডাইনের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, এখন ঢাকায় আছি। সিলেটে ফিরে আমরা বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করব। সত্যতা পেলে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে মাংস সরবরাহকারী মা-বাবা দোয়া প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী মোহাম্মদ সুমন বলেন, ‘আমাদের দোকান আছে ঢাকার কাপ্তান বাজারে। খাসিগুলো সেখানে জবাই করা হয়। পরে সেখান থেকে মাংসগুলো বস্তায় ভরে বাসে করে সিলেটের কদমতলীতে আনা হয়। সেখান থেকে আমরা কয়েকজন ববস্তাগুলো দাঁড়িয়াপাড়ার এই বাসায় আনি। পরে এখানে মাংসের সাইজ করে সুলতান’স ডাইনে সাপ্লাই দিই।’