কুলাউড়া প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর শিববাড়ি দৃষ্টিনন্দন একটি মন্দির। প্রায় ১৫০ বছরের পরিক্রমায় এ বছরও এ শিববাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গোৎসব। প্রাচীন কারুকার্যময় মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী এক অপরূপ নিদর্শন কাদিপুর শিববাড়ি, যা আকর্ষণ বাড়ায় সবার মনে। ২০২২ সাল থেকে শিববাড়িতে ২৩ ফুট উঁচু সহস্রভুজা (এক হাজার হাতের) দুর্গা প্রতিমার পূজা চলে আসছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে আগামী বুধবার থেকে। পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের শেষ হবে ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
ইতোমধ্যে শিববাড়ি মন্দির পরিদর্শন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় ও দীপঙ্কর ঘোষ, ওসি মো. গোলাম আফসার ও সেনাবাহিনীর টহল টিম।
শিববাড়ির সৌন্দর্য রং-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রবেশ মুখ থেকে বাড়ির ভেতর পর্যন্ত পাকা সাদৃশ্য একাধিক তোরণ রয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে বাড়ির ভেতর পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ ফুট রাস্তা আরসিসি ঢালাই করা হয়েছে দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে। বাড়ির ভেতরে পাশাপাশি তিনটি মন্দির। ‘আনন্দ সেবাধাম’ নামে মন্দিরের দোতলায় ২০২২ সালে লাল রং দিয়ে এক হাজার হাতের দুর্গা প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে। সিমেন্টের তৈরি এ প্রতিমার উচ্চতা ২৩ ফুট। এ বছর নতুন করে বড় দুটি মন্দিরের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে। ‘শ্রী শ্রী ভৈরবী মা’ নামে আরেকটি মন্দির।
ঐতিহ্যবাহী এ ধর্মীয় স্থান সম্পর্কে স্থানীয় লোকজন জানান, এ বাড়ির স্বর্গীয় অনঙ্গ কুমার সোম ছিলেন জমিদার বংশের ব্যক্তি। তার পরবর্তী বংশধররাই এ উৎসবের প্রচলন ঘটান। শিববাড়ির পূর্বপুরুষদের জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটলে একসময়ের প্রতাপশালী জমিদার পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পরে। ফলে প্রায় ৩১ বৎসর দেবী দুর্গার ঘটপূজা তারা করেন। তখন সেই বনেদী পূজা-পার্বণে আকাশছোঁয়া জৌলুস হারিয়ে গেলেও তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে একবিন্দু ঘাটতি পড়েনি। পরে ২০০১ সালে জমিদারি বাড়ির মন্দিরটি জৌলুস ফিরতে শুরু করে, যা এখনো চলছে। প্রতিবছর দুর্গাপূজায় লাখো ভক্তদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠে কারুকার্যমণ্ডিত অনিন্দ্যসুন্দর এ মন্দিরটি, যা ভক্তদের আকৃষ্ট করে। ছুটে আসেন দেশবিদেশের লাখো ভক্ত।
শিববাড়ির বাসিন্দা আচার্য পুলক সোম বলেন, রং-তুলির ছোঁয়া প্রায় শেষ হয়েছে, পূজার সময় এগিয়ে আসছে। এবার রাত ১১টার পর প্রধান ফটক বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবার সহযোগিতায় এবারও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পূজা উদযাপন করা হবে। নিরাপত্তার জন্য শিববাড়ির বিভিন্ন স্থানে ২০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। লাল রং দিয়ে সহস্রভুজা দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এটা চলবে প্রতিবছর। তবে প্রতিমার বিসর্জন হবে না।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আফসার বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে বিট পুলিশিং, সর্বদলীয় নিরাপত্তা কমিটি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সম্প্রীতি সমাবেশ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন বলেন, সিলেটের সর্ববৃহৎ কুলাউড়ার শিববাড়ি মন্দিরের দুর্গাপূজায় সর্বশেষ প্রস্তুতি খুবই সন্তোষজনক। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার বাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।