২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

add

এইচএসতিতে দেশসেরা সিলেট

todaysylhet.com
প্রকাশিত ১৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ২০২৪ ২৩:৩২:৩৬
এইচএসতিতে দেশসেরা সিলেট

এহিয়া আহমদ :: চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে অন্যান্য সকল বোর্ড থেকে এগিয়ে সিলেট। বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা বাকি ৯টি শিক্ষাবোর্ড থেকে বেশি। সিলেট বোর্ডের অধীনে এইচএসসির ফলাফলে সব সূচকে এগিয়ে আছেন মেয়েরা। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এগিয়ে রয়েছেন মেয়েরা।

এবার সিলেট বোর্ডের অধীনে ৮৩ হাজার ১শ’ ৬৫ জন পরিক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৭১ হাজার ১২ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৬শ’ ৯৮ জন। ৪৯ হাজার ৩শ’ ৫৪ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেন ৪২ হাজার ৬শ’ ৬১ জন। ছাত্রীদের পাসের হার ৮৬ দশমিক ৪৪। এদিকে ৩৩ হাজার ৮শ’ ১১ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেন ২৮ হাজার ৩শ’ ৫১ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৮৩ দশমিক ৮৫। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছেলে ২ হাজার ৮শ’ ৬৯ এবং মেয়ে ৩ হাজার ৮শ’ ২৯ জন।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসার ম. জাকির আহমদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বোর্ড সচিব চৌধুরী মামুন আকবর, কলেজ পরিদর্শক ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, স্কুল পরিদর্শক মঈনুল ইসলাম, সিস্টেম এনালিস্টট সরকার ম আতিকুর রহমান, উপ-পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক হাবিবা বাসিত ও শরীফ আহমদ, সহকারি পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক দ্যিপেশ রঞ্জন দাস ও ফারুক আহমদ, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নিহার কান্তি রায় এবং সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলম।

বোর্ডের তথ্য মতে, এবার বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, মানবিকে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৭ এবং ব্যবসায় সর্বনিম্ন ৭০ দশমিক ১৩ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে ১৫ হাজার ৫শ’ ৮৩ জন পরিক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৪ হাজার ৭শ’ ১৬ জন, মানবিকে সর্বাধিক ৫৬ হাজার ২শ’ ৭ জন পরিক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪৮ হাজার ৩শ’ ১৯ জন এবং ব্যবসা শিক্ষায় ১১ হাজার ৩শ’ ৭৫ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৭ হাজার ৯শ’ ৭৭ জন। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৩শ’ ২৩ জন। এরমধ্যে ছেলে ২ হাজার ৪শ’ ৪২ জন এবং মেয়ে ২ হাজার ৮শ’ ৮১ জন। মানবিক বিভাগে ১ হাজার ১২ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছেলে ২শ’ ৯২ এবং মেয়ে ৭শ’ ২০ জন এবং ব্যবসায় ৩শ’ ৬৩ জনের মধ্যে ছেলে ১শ’ ৩৫ এবং মেয়ে ২শ’ ২৮ জন।

জানা যায়, এবারের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয় ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষার পর সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এতে এইচএসপি ও সমমানের পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়। এরপর প্রথমে ১১ আগস্ট ও পরে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে আগস্টে সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা বিভাগ। পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এবারের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল প্রকাশ করা হবে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিল, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নম্বর বিবেচনা করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

 

সূত্রমতে, সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গত বছরের তুলনায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই বেড়েছে। এবার সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯। যা গত বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। গত বছর পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৬২। গত কয়েকবছর সিলেটে জিপিএ কম থাকলেও এবছর রেকর্ড ৬ হাজার ৬শ’ ৯৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলে ১ হাজার ৬শ’ ৯৯ জন শিক্ষার্থী। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ৮৩ হাজার ১শ’ ৫৬ জন অংশ নিয়ে ৭১ হাজার ১২ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।

সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল জানান, প্রথমে বন্যা ও পরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসির সবগুলো বিষয়ের পরীক্ষা এবার নেওয়া সম্ভব হয়নি। যে বিষয়গুলো নেওয়া সম্ভব হয়েছে সেগুলোর ফলাফল স্বাভাবিক নিয়মে এসেছে আর যে বিষয়গুলো নেওয়া সম্ভব হয়নি সে বিষয়গুলোর ফলাফল এসএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। শতভাগ পাশ করেছে এমন কলেজের সংখ্যা সিলেটে ৮টি যা গতবছর ছিলো ২টি। শতভাগ ফেল এমন কলেজ বোর্ডে নেই। এবার ফলাফলে সিলেট বোর্ডে এগিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে আইসিটিতে ভালো ফলাফলের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পাসের হার ৯৪ দশমিক ১৪। যা শতকরা পাসের হারকে টেনে তুলেছে। তবে বোর্ডের ফলাফল আরো ভালো হতো যদি ব্যবসায় ফলাফল ভালো হতো। বাণিজ্য পাসের হার কম ৭০ দশমিক ৩ শতাংশ। পাসের হার কম হওয়াতে শতভাগ সাফল্যে অন্তরায় হয়েছে। অবশ্য ব্যবসায় অ্যাকাউন্টিংয়ের পরিক্ষা কঠিন হওয়াতে পাসের সূচকে টানে ধরেছে। তিনি আরও বলেন, এসএসসিতে যে সকল বিষয়ে পরিক্ষা হয় নাই, সে সকল বিষয়ে এসএসসিতে শতভাগ (অটোপাস) নেওয়া হয়েছে। এবার বিষয় মূল্যায়ন করা হয়েছে পুরোপরি অটোপাস নয়।

উল্লেখ্য, প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, পাসের হারে এ বছর শীর্ষে থাকা সিলেট বোর্ডের পরেই রয়েছে বরিশাল বোর্ড। বরিশালে পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তার কাছাকাছি অবস্থানে রাজশাহী বোর্ড। রাজশাহীতে পাসের হার ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ। পাসের হারে এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ঢাকা বোর্ড ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, যশোরে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।