টুডে সিলেট ডেস্ক :: ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকালীন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংকটসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দেশের তরুণদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
পাশাপাশি তিনি এই খাতের ভাবমূর্তিসহ সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রশিক্ষণ, ইন্টার্নশিপ, মেন্টরশিপ এবং অর্থনৈতিক বিভিন্ন প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সচিবালয়ে অ্যামটব, বেসিস, বাক্কো, আইএসপিএবি, বিসিএস, ই-ক্যাবসহ টেলিযোগাযোগ খাতের অংশীজনদের সঙ্গে সমকালীন বিষয়ে বৈঠক শেষে এক প্রশ্নে এ ঘোষণা দেন।
পলক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় আমাদের মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি খাত মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতির বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের আইসিটি এবং টেলিকম সেক্টরটা অনেকটাই বিদেশি গ্রাহক নির্ভর। আমাদের সফটওয়্যার ৬০-৭০টি দেশে আছে। সেখানে সুনাম ধরে রাখতে হয়। এই অবস্থায় যারা সফটওয়্যার রপ্তানিকারক, তাদের বড় ধরনের বিশ্বাস বা আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। একইভাবে আমাদের ফ্রিল্যান্সার যারা তাদের সফটওয়্যার বা সার্ভিস দিয়ে বৈদেশিক আয় করে সেটাও কিন্তু মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দেশে এবং বিদেশে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে তাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভাবমূর্তিও কিন্তু অনেকটাই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। এসব মিলে অর্থনৈতিক, কর্মসংস্থানে বিদেশি গ্রাহকদের কাছে ভাবমূর্তির বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছি। এজন্য আমাদের অংশীজনদের সাথে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, আইএসপিএবি, বেসিস, বাংলাদেশ আউটসোর্সিং অ্যান্ড কনট্যাক্ট সেন্টার অর্গানাইজেশনসহ ডাক টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় অধীনে যারা বেসরকারি খাতে ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ আছেন, দুই সপ্তাহ একটা সংকটকালীন অবস্থায় তারা যে সহযোগিতা করেছে সেজন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
‘এটুকু আশ্বস্ত করতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংকটকালীন অবস্থা কাটিয়ে আমাদের স্বাভাবিক অবস্থায় আসার জন্য যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছেন এবং আমাদের ছাত্র-ছাত্রী আমাদের সন্তান যারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কর্ণধার, তাদের সাথে আমাদের যে একটা ভুল বোঝাবুঝি বা দূরত্ব তৈরি হয়েছে এটা আমরা যেভাবেই হোক, আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। যেভাবেই হোক এই পরিস্থিতিটা সৃষ্টি হয়েছে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অবশ্যই আমাদের এই প্রযুক্তি শিল্প সম্পূর্ণ তারুণ্য নির্ভর। আইটি ফ্রিল্যান্সিং, সফটওয়্যার, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, আউটসোর্সিং পুরোটাই আমাদের তারুণ্য নির্ভর শিল্প। এই তারুণ্যের শক্তি এবং ইন্টারনেট নির্ভর শক্তি মিলে আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ সংকট কাটিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলব। ’
তিনি বলেন, আপনারা মিথ্যা কোনো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না, এই সংকটকালীন সময়ে অনেক সুযোগ সন্ধানী দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। আমরা সকলে যেন ঐক্যবদ্ধ তাকি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
তরুণদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার ঘোষণা দিয়ে পলক বলেন, আমাদের দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের ক্যাপাসিটি সাত হাজার জিবিপিএস। আমাদের আইএসপিএবি, বেসিস, বাক্কো- এগুলো তরুণদের মেধা এবং ইন্টারনেটের উপর তাদের ব্যবসার মূল চালিকাশক্তি। আমরা তাদের কথা শুনেছি। আমরা তাদের দাবির কথা শুনেছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের একটা আইডেন্টিটি দিয়েছিলেন, একটা রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম করে দিয়েছিলেন এবং উনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাদের যে আয় হয় তার উপর একটা ইনটেনসিভ দেওয়ার। আমাদের আইটি সেক্টরে ১০ শতাংশ ইনটেনসিভ আছে। ফ্রিল্যান্সার ভাই-বোনদেরকেও আসলে একটা ইনটেনসিভ দিতে চাই। গত পরশুদিন বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধপত্র দিয়েছি। এটায় আরও জোর দেব যাতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সাত লাখ ফ্রিল্যান্সার ভাই-বোনেরা, ইনডিভিজ্যুয়ালি ফ্রিল্যান্সারাও যাতে একটা ইনটেনসিভ পায়। আমরা আশা করছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাবো।
তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করেছি ইন্টারনেটের দামটা গ্রাহক পর্যায়ে এবং ব্যবসায়িক পর্যায়ে আরও কীভাবে কমানো যায়। ইতোমধ্যে গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী কমিয়ে প্রতি এমবিপিএস ৬০ টাকার নিচে কমিয়ে এনেছেন। এটা গত ১৫ বছর আগে ৮৫ হাজার টাকা ছিল।
পলক বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের আস্থা-বিশ্বাস কীভাবে বাড়াতে পারি এবং এই যে একটা কর্মসংস্থানের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে সেটা কীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি, আমাদের আইসিটি বিভাগের একটা ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম আছে যেখানে আমরা লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীকে ইন্টার্নশিপের আওতায় আনতে পারবো। আমাদের ইনহেন্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট প্রোগ্রামে সরকারি-বেসরকারি দেড়শ বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেখানে হয়ত আমরা প্রযুক্তি খাতে আরও লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীকে কিছু প্রশিক্ষণ, কিছু ইন্টার্নশিপ, মেন্টরশিপ দিয়ে তাদেরকে আমরা ইকোনমিকভাবে জেনারেট করতে পারবো। পাশাপাশি আমাদের যে সফটওয়্যার শিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা খেলাম সেটা দ্রুত কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারি এবং ভবিষ্যতে ইমার্জেন্সি নেটওয়ার্ক কনটিউনিটি প্রোটোকল কীভাবে তৈরি করতে পারি- তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৪ শতাংশ ঋণে তহবিল গঠন করা হয়েছে। আমার জানামতে সেখানে ৫০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা সেই তহবিল আছে। সেটা কীভাবে ৪ শতাংশ বা আরও অল্প সুদে যারা সফটওয়্যার শিল্ট বা ইন্টারনেট সার্ভিসে আছে বা হার্ডওয়্যার বা মোবাইলের বিভিন্ন শিল্পে আছে বা আউটসোর্সিং শিল্পে আছে তাদের জন্য কীভাবে এই স্টার্ট-আপ তহবিল কাজে লাগাতে পারি সেজন্য আমরা একটা সুপারিশ তৈরি করবো।
টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের তারুণ্যের মেধা এবং প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি প্রগতিশীল উন্নত সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবো তার জন্য সংকটকালীন যে অভিজ্ঞতা তৈরি হলো তা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, কখনই বাংলাদেশে যাতে ইন্টারনেট সম্পূর্ণ ব্যাহত না হয় তার জন্য ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের পরামর্শ গ্রহণ করেছি। কীভাবে বিজনেস কন্ট্রিবিউট প্ল্যান করা যায়, কীভাবে জরুরি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক কনটিউনিটি প্রটোকল তৈরি করতে পারি। আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরে চালু করতে পেরেছিলাম, কিন্তু এমএফএস কেন কাজ করতে পারলো না- এসব ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।