জুড়ী প্রতিনিধি :: সবুজ কমলার জন্য বিখ্যাত মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কমলার বাগান। বাগানগুলোতে খাঁসি ও নাগপুরি জাতের কমলাগাছের আবাদ হয়। এতে শুরু হয়েছে পোকার আক্রমণ। নতুন শত্রæর আক্রমণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে জুড়ীর কমলাগাছ। একাধারে মারা যাচ্ছে পুরাতন কমলাগাছ। পাশাপাশি নতুন চারাও বড় হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছে। চতুর্মুখী আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ৯৭ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৯৫টি কমলা বাগান আছে। তার মধ্যে উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে আছে ৬২ হেক্টর। বাগানগুলোতে অধিকাংশ কমলা খাঁসি ও নাগপুরি জাতের। যা খেতে খুব সুস্বাদু। এ বছর কমলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬শ’ ৯৫ টন।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লালছড়া গ্রামের কমলা চাষি মোর্শেদ মিয়া জানান, তার বাগানে প্রায় ১ হাজার ৫শ’ কমলাগাছ ছিল। ৩ বছরে ৪শ’ গাছ মারা গেছে। বাকি ৬শ’ গাছের মধ্যে প্রায় ২শ’ গাছ মারা যাওয়ার পথে। প্রথমে এক ধরনের সাদা পোকা মাটির নিচে কমলার শিকড় থেকে পানি শুষে ফেলে, পরে উঁইপোকা শিকড় খেয়ে ফেলে।
তিনি জানান, প্রথম বছর গাছের পাতা হালকা হলুদ হয়, দ্বিতীয় বছর পাতা পুরোপুরি হলুদ হয়ে যায় এবং পাতা ঝরা শুরু হয়, তৃতীয় বছর গাছটি মারা যায়। পোকার আক্রমণের শুরুতে কমলার আকার স্বাভাবিক থাকলেও দ্বিতীয় বছর আকার ছোট হয় এবং পরের বছর একেবারে ছোট হয়ে যায়।
লালছড়া এলাকার আরেক কমলা চাষি জয়নুল মিয়া জানান, বাগানে তার ৮শ’ কমলাগাছ ছিল। কয়েক বছরে ১শ’ কমলাগাছ মারা গেছে। প্রজাপতির মতো এক ধরনের পোকার আক্রমণে গাছগুলো মারা যায়। পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওষুধে কাজ হচ্ছে না। ওষুধের কার্যকারিতা যত সময় থাকে; তত সময় পোকার আক্রমণ বন্ধ থাকে। এরপর আগের মতোই।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. মাহমুদুল আলম খান বলেন, চাষিদের দেওয়া তথ্যে পরিদর্শনে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যা নির্ণয় করেছি। বাগানগুলো পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কিছুটা বেশি। উঁইপোকা, মিলিবাগ, ফোমিংয়ের পর বিটল, গান্ধী প্রজাপতির (ফুট সাকার) মতো পোকার আক্রমণ আছেই। আমরা বেশ কিছু কীটনাশক সরবরাহ করেছি। কিছু কাজ করেছে এবং কিছু করে নাই। এখানে অপরিচিত কিছু মথ আছে; যেগুলোকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাবলু সূত্রধর বলেন, সম্প্রতি উপজেলা কৃষি অফিসারসহ আমরা কমলা বাগান পরিদর্শন করেছি। সমস্যাগুলো বিশ্লেষণসহ-সুপারিশ আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেবো। যাতে কমলা চাষ আরও সমৃদ্ধ হয়। চাষিরা উপকৃত হন।