নিজস্ব প্রতিবেদক :: দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরাশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ডিজিএফআই এর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে সেনা কর্মকর্তা আবুল্লাহিল আমান আজমী সহ অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। তিন গত তিন দিনেও বাড়ি ফিরেন নি একযুগ আগে গুম হওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কোথায়?
গতকাল মঙ্গলবার জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতার ‘গুম’ হওয়া দুই ছেলে ফিরে এসেছেন পরিবারের মাঝে। আর এতেই আলোচনায় এসেছেন ‘গুম’ হওয়া বিএনপির প্রভাবশালী নেতা, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী। এবার কি ইলিয়াস আলীও ফিরবেন, এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সিলেটের মানুষের মধ্যে। বিএনপির দাবি, ইলিয়াস কথিত বন্দিশালা ‘আয়নাঘরেই’ থাকতে পারেন। তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে।
মঙ্গলবার ৮ বছর পর কথিত বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্ত হয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। গতকাল ভোরে তারা নিজ নিজ বাসায় ফেরেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও আহমাদ বিন কাসেমের মুক্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে।
গত ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলী নিখোঁজের একযুগ পূর্ণ হয়েছে। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে গাড়িতে করে নিজের বনানীর বাসা থেকে বের হন ইলিয়াস আলী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গাড়িচালক আনসার আলী। রাত ১২টার পর মহাখালী থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ইলিয়াস আলীর প্রাইভেট কারটি উদ্ধার করে পুলিশ। তখন গাড়িতে ছিলেন না ইলিয়াস ও তার গাড়িচালক।
বনানী থানার তৎকালীন এসআই সাইদুর রহমান সেসময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মধ্যরাতে ইলিয়াস আলীর প্রাইভেট কারটি মহাখালী সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়ির ভেতরে পাওয়া চালক আনসারের মোবাইল ফোন সূত্রে জানা যায় গাড়িটি ইলিয়াস আলীর।
এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা। দীর্ঘ এক যুগেও তার নিখোঁজ হওয়ার রহস্য উদঘাটন হয়নি। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই সিলেট বিএনপি নেতারা নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি করে আসছেন। ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির নেতারা। তবে কোনো সন্ধান মেলেনি তার।
শেখ হাসিনার পতনের পর জামায়াতের সাবেক শীর্ষ দুই নেতার ছেলেদের মুক্তির পর ফের আলোচনায় এসেছে ইলিয়াস আলীর বিষয়টি। মঙ্গলবারসিলেটে এক সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। পাশাপাশি দীর্ঘ ১৫ বছরে দলের যেসব নেতাকর্মী ও ছাত্রজনতাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, কথিত বন্দিশালা থেকে অনেকেই মুক্ত হচ্ছেন। ইলিয়াস আলীকেও এখন মুক্তি দিতে হবে। এই মুহূর্তে আমাদের দাবি ইলিয়াস আলীকে ফেরত দিতে হবে। ইলিয়াস আলীর সন্ধান শেখ হাসিনার সময়কার কিছু ব্যক্তি জানেন। অবিলম্বে তার সন্ধান দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতা সিদ্দিকী বলেন, আমরা এখনও বলছি রাষ্ট্রের কোনো একটি সংস্থা ইলিয়াস আলীকে গুম করে রেখেছে। এই মুহূর্তে তাকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। শুধু ইলিয়াস আলী না, বিএনপির যত নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে সবাইকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয় দেওয়া হোক।