সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আগত শিশু, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধরা প্রতিদিন সুচিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই। আর জনবল শূন্যতা পূরণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় উপজেলার সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তবে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহেনা মারুফ ফারুকী জানিয়েছেন, তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর থেকেই জনবল সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যাবিশিষ্ট। গত ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি তৎকালীন সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিছবাহ ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নীত করে উদ্বোধন করেন। কিন্তু যন্ত্রপাতি থাকলেও ৫০ শয্যার জনবল পদায়ন করা হয়নি। জনবল না দেওয়ার মঞ্জুরিত ৩৭টি পদে ১১২ জনের মধ্যে ৫৮ জন কর্মরত থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ৪৯ পদই শূন্য রয়েছে।
এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট চারজনের মধ্যে তিনজন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার একজন, মেডিকেল অফিসার একজন, সহকারী রেজিস্ট্রার/সার্জন চারজনের মধ্যে দুজন, ডেন্টাল সার্জন একজন, অ্যানেসথেসিয়া একজন, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সাতজনের মধ্যে চারজন, নার্সিং সুপারভাইজার একজন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৫ জনের মধ্যে ১৪ জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি ও ইমেজিং) একজন, ডেন্টাল একজন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) একজন, প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক একজন, স্টোর কিপার একজন, পরিসংখ্যানবিদ একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর একজন, অফিস সহায়ক তিনজন, আয়া দুজন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পাঁচজন, মালী একজন, নিরাপত্তা প্রহরী দুজনসহ ৪৯ পদ শূন্য রয়েছে। এ কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরতরা কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন আগতদের।
চিকিৎসা নিতে আসা সন্তান সম্ভবা রহিমা বেগম জানান, আমি গরিব মানুষ, চিকিৎসা নিতে এসে দেখি মহিলা ডাক্তার নেই। এছাড়াও এখানে কোনো ধরনের অপারেশন ও ডেলিভারি করানো হয় না। এ কারণে জেলা শহরে যেতে হবে। মহিলা ডাক্তার না থাকায় আমরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। হাসপাতালে বড় বড় ভবন আছে, ডাক্তার নেই। এই যদি হয় একটি সরকারি হাসপাতালের অবস্থা আমরা কই যাবো।
হাত ভেঙে যাওয়ায় চিকিৎসা নিতে আসা শফিক মিয়া জানান, এই হাসপাতালে এক্স-রে, রক্তসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে না। এ কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মুখে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অতিরিক্ত সময় ও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পরীক্ষা করছি বাধ্য হয়ে। তাদের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। আমরা তো শেষ, যেন দেখার কেউ নেই।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহ দেলোয়ার হোসেন দিলু জানান, সুচিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটিতে জনবল সংকট দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব।
হাসপাতালে জনবল সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বর্তমান সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল শূন্যতার বিষয়ে অবগত আছেন বলে জানান উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহেনা মারুফ ফারুকী।
তিনি আরও জানান, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এই শূন্যতার মধ্যেই সেবার মান বজার রাখার কিন্তু পারছি না। কোনো ধরনের অপারেশন হয় না। জনবল না পাওয়ায় চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ আর আমরাও হিমশিম খাচ্ছি।